আক্তারুজ্জামান, এস এ সাদিক খান
জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত গরম ও নতুন রোগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জমির ধান। মাঠের পর মাঠ ধান পেকে গেছে মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা যায় পাকা নয়ম ধানের শীষে চিটে ধরে ধান সাদা হয়ে গেছে। আক্রান্ত হওয়ার ৪-৫ দিনের মধ্যে জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কষ্টের ফসল। নতুন এ রোগের কোন প্রতিষেধক না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা।
সারা বছর পরিবারের চালের চাহিদা মোটাতে ও পরবর্তী আবাদ করতে বোরো মৌসুমে ধান চাষ করে কৃষক। এ সময়ের ধান নিজেদের খাবারের জন্য রেখে বাকি ধান বিক্রয় করে পরবর্তী আবাদে যায় কৃষক।
কিন্তু এবার পরবর্তী আবাদ নিয়ে শংকিত ধান চাষিরা। উৎপাদিত ধান ঘরে তোলার পূর্বেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। কৃষকের হাসিতে নেমে এসেছে মলিনতার ছাপ। প্রচন্ড তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরমে জমির ধানের শীষ চিটায় পরিণত হচ্ছে। গাছ ভাল থাকলেও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধানের শীষ। ইতিপূর্বে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়নি ধান চাষিরা। অনেকেই বলছেন গমের ন্যায় বরো ধানে ব্লাস্ট ভাইরাস।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রোগটি ইতিপূর্বে কখনও দেখেনি চাষীরা। সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেও উপকার পাচ্ছে না তারা। বিভিন্ন কোম্পাণী ও এলাকার সার বিষের দোকান থেকে পরামর্শ নিয়ে বিষ প্রয়োগ করেও সমাধান হচ্ছে না ফলে ধানের ফলন নিয়ে বিপাকে পড়েছে তারা। জমি থেকে ন্যুনতম ফসলও পাবেন না বলে জানায় তারা। রয়েছে কৃষি বিভাগের প্রতিও অভিযোগ। কৃষি বিভাগ নতুন এ রোগের কার্যকর সমাধান দিতে পারছে না বলে আভিযোগ চাষীদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার থেকে ১৫০ হেক্টর জমিতে বেশি ধানের চাষ হয়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি, চাঁদবিল, যাদবপুর, বর্শিবাড়িয়া, গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া, সহগলপুরসহ জেলার প্রায় অধিকাংশ জমিতেই বিআর ২৮, বিআর ৪৮ ও বিআর ৬৩ ধানের এ রোগে আক্রান্তের হার বেশি।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, বোরো মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করি নিজেদের খাবারের জন্য। ধান ঘরে তোলার আগেই দেখা দিয়েছে নতুন রোগ। নতুন রোগে শীষ বিবর্ণ হয়ে দানা হচ্ছে না। গাছ ভাল থাকলেও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধানের শীষ। ধান আবাদে ইতিপূর্বে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হননি তিনি।
একই গ্রামের খায়রুল আলম জানান, সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেও আমার ছয় বিঘা বিআর ২৮ জমির ধান চিটা হওয়া থেকে রক্ষা পাইনি। তবে মাঠের পর মাঠ ধাণ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কৃষি অফিস থেকে এখনো পর্যন্ত কেই কোন খোঁজ নেয়নি। কৃষি অফিসারদের মোবাইল ফোন করে তাদের পরামর্শ নিয়ে পটাশ ছিটিয়ে, নাটিভো স্প্রে করেও কোন লাভ হয়নি।
তিনি আরো জানান, বিআর ২৮, বিআর ৬৩, বিআর ৪৮ ধানের এই রোগ বেশি দেখা দিয়েছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণে কিছু কিছু জমিতে ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়েছে। তাপমাত্রা যখন ৩৫ ডিগ্রির বেশি হয় তখন গরমে ধানের শীষগুলো চিটে হয়ে যায়। এটা মূলত জলবায়ুগত সমস্যা। যেসব জমিতে এখনও থোর আসেনি সেসব জমিতে সেচের পাশাপাশি বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি পটাশ সার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।