অনলাইন জুয়ার শীর্ষ এজেন্ট মহাজনপুর ইউনিয়নের মেম্বর ময়নদ্দিন ওরফে ময়নার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
গতকাল বুধবার মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মুজিবনগর আমলী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ময়নদ্দিন ওরফে ময়না মেম্বর মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।
অনলাইন জুয়ার এজেন্ট পরিচালনা করে ময়না মেম্বর কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মেহেরপুর শহরের নীলমনি সিনেমা হলপাড়ায় ৬তলা ভবন তৈরি, নিজ গ্রাম কোমরপুরে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে রাজপ্রাসাদ বানিয়েছেন ময়না মেম্বর। এছাড়া ভাইয়ের নামে ভাটা ব্যবসা করেন ময়না মেম্বর।
মেহেরপুর প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশ ও পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে থাকেন ময়না। বেশ কিছুদিন ভারতে পালিয়েও ছিলেন তিনি। পরে উচ্চ আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ নভেম্বর রাতে মুজিবনগর থানার ওসি মেহেদী রাসেল ও মেহেরপুর সাইবার ক্রাইম অপরাধ বিভাগের এস আই এস এম মনিরুজ্জামান মিলনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম কোমরপুর থেকে জিহাদ আলীকে আটক করে। জিহাদ আলী ময়না মেম্বারের সাব এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো।
এর আগে ২৫ আগষ্ট বদরুদ্দোজা ওরফে রয়েল নামে প্রথম এক অনলাইন এজেন্ট আটক করে ডিবি পুলিশ। রয়েলের দেওয়া স্বীকারোক্তীতে ১১ নম্বর মামলার আসামি দেখা হয়েছিলো জাহিদ ওরফে শিমুলকে। শিমুল একাধারে ময়না মেম্বরের মাসুদ, রুবেল, নাসির শাহ পাশাপাশি মেহেরপুরিয়ান সপের মালিক ও মহাজনপুরের হেলালের সাব এজেন্ট হিসেবেও কাজ করতো।
ওই সময় জাহিদকে মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক এস এম শরিয়ত উল্লাহ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করেন। জিহাদ আলী প্রথমে ময়না মেম্বার, মাসুদ ও রুবেলের সাব এজেন্ট গোপালপুরের এবং পরিচালনা করতো এবং পরে নাসির শাহ মহাজনপুরের হেলালের সাব এজেন্ট হিসেবে মাসিক বেতনে কাজ করতো বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
জানা গেছে, জিহাদ ওরফে শিমুলের কাছে থেকে পুলিশ মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। যে মোবাইলে ০১৮৩২-৫৩০৯১৫ ও ০১৯৮৮-২৩২৯৯৫ নম্বরের দুটি সিম ছিলো। মোবাইলে অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারী রেড্ডি অ্যাপসে সাব এজেন্ট ৮৪৪২ এ ৮লাখ ৬৮৮৫৯ টাকা ব্যালেন্স ছিলো। অনলাইন জুয়ার চ্যানেল ফাজনাত নগদ এ ৬ লাখ ৬৮ হাজার৬৩৬ টাকা, ফাজনাত উপায় এ ৮লাখ ৭হাজার ৯০৩ টাকা ব্যালেন্স পাওয়া যায়।
এসময় আসামী শিমুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায়, সে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন জুয়ার চ্যানেল মালিক কোমরপুর গ্রামের আনছার মেম্বারের ছেলে বর্তমান মেম্বর ময়নদ্দিন ওরফে ময়না মেম্বার, বলিয়ারপুর গ্রামের মুনসুর আলীর ছেলে মো: মাসুদ, কোমরপুর গ্রামের আনারুলের চৎরাধপ রুবেলের চ্যানেলের সাব এজেন্ট হিসেবে কোমরপুর গ্রামের আনারুলের ছেলে রুবেলের চ্যানেলের সাব এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো। পরবর্তিতে পুলিশের অভিযান শুরু হলে তাদের কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিতে গোপালপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে নাসির শাহ ও মহাজনপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার বাটুলের ছেলে হেলালের ওয়ান এক্স বেটের সাব এজেন্ট হিসেবে বেতনভুক্ত হয়ে কাজ করতো এবং মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতন পেতো। বর্তমানে ওয়ান এক্স বেটের ফাজনাত বিকাশ, ফাজনাত উপায় ও ফাজনাত নগদ নামে তিনটি অনলাইন জুয়ার সাব এজেন্ট পরিচালনা করছিলো।
আরো জানা যায়, জিহাদ আলী ব্যবহৃত সাব এজেন্টের সিমগুলো জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, রংপুরসহ কয়েকটি জেলার নাম দিয়ে করে অনলাইন জুয়ার পরিচালনা করে আসছিলো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতিত অবৈধ ই ট্রানজেকশনের মাধ্যমে রাশিয়ান অনলাইন জুয়া সাইট ওয়ান এক্স বেট ও মেলবেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোটি কোটি টাকা পাচার করছেন অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতরা। আর এ কাজে সহযোগীতা করছেন মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় এর সাথে সেলস প্রতিনিধিরা। তারা মোটা টাকার বিনিময়ে জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে অনলাইন জুয়ার এজেন্টের এজেন্ট সরবরাহ করছেন।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর, মহাজনপুর, গোপালপুর, সদরের টুঙ্গী, মেহেরপুর শহর, গাংনীর গাড়াডোবসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে অনলাইন জুয়ার দূর্গ গড়ে উঠেছে। এসব দূর্গে পুলিশ হানা দিয়ে এ পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের অভিযানের পাশাপাশি মেহেরপুর প্রতিদিনও ধারাবাহিকভাবে অনলাইন জুয়ার আদ্যপান্ত নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে । ফলে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতরা একরকম কোনঠাসা হয়ে পড়ে। গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন, অনেকেই রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে রয়েছেন। মেহেরপুর জেলা থেকে দুই শতাধিক এজেন্ট অনলাইন জুয়া সাইটের মাধ্যমে রাশিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছেন শত শত কোটি টাকা