আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের অনিয়মিত অফিস করা ও দুর্নীতি বন্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন ও নির্বাহী অফিসার লিটন আলীর দেওয়া আল্টিমেটাম উপেক্ষিত হয়েছে।
মামুন বাবর সরকারি নিয়মানুযায়ী অফিসে না এসে বুধবারও দুপুর ১ টা ১০ মিনিটে অফিসে ঢোকেন। অফিসে ঢুকেই তিনি সাংবাদিকদের গালিগালাজ করেন এবং এক হাত নেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধেও। তিনি টেবিল চাপড়িয়ে উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও‘র কাবিখা নিয়ে তো আমরা কথা বলি না।’
আলমডাঙ্গার সর্বোচ্চ দুই কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরকে নিয়ম করে সময় মত অফিস করতে আল্টিমেটাম দেওয়ার পর তিনি তাদের ওপর বেজায় রেগে যান। কেউ তাকে কিছু করতে পারবে না বলেও পাল্টা হুমকি দেন।
প্রশ্ন উঠেছে, কোথায় তার ক্ষমতা? কেন তিনি সকালের অফিসে বিকেলে আসেন? আর প্রকাশ্যে কিভাবে দুর্নীতির টাকার ব্যাগ গুছিয়ে তিনি অফিস ছাড়েন? আলমডাঙ্গার মানুষ দেখেও কেন না দেখার ভান করে থাকেন? আর কেনই বা উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারও তাকে নিয়মের ভেতরে আনতে পারছেন না? এরকম অনেক প্রশ্ন মানুষের মাথায় মাথায় ঘুরছে।
কিন্ত হাজারো বার মাথা খাটিয়েও এর কোন সদুত্তোর কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে একটা বিষয় সবাই একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন, আর তা হল মামুন বাবরের হাত অনেক লম্বা। তার লম্বা হাত সরকারি কোন সংস্থাই ছুঁতে পারছে না।
সূত্র মতে, সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের হুমকি-ধামকিতে অফিসের সবাই থাকেন ভয়ে ভয়ে। বেশী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকেন দলিল লেখকরা। দলিল লেখকদের কেউ একটু বিরাগভাজন হলেই তার দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ হয়ে যায়। লাইসেন্স বাতিলেরও হুমকি দেওয়া হয়। এই হুমকি অনেক সময় দলিল লেখকদের জীবনেরও হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের স্বেচ্ছাচারিতার এসব কথা ছড়িয়ে বেড়ায় আলমডাঙ্গার আকাশে-বাতাসে। ঠিক এমন অবস্থায় টনক নড়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের। সময় মত অফিসে না আসা, দুর্নীতিতে ডুবে থাকা ও চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সাব-রেজিস্টার মামুন বাবরকে গত সোমবার আল্টিমেটাম দেন আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী। সময় মত অফিসে না এলে প্রয়োজনে সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে ঢোকার সব পথ বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয় তাকে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত মামুন বাবর অফিসে না আসায় উপজেলার সর্বোচ্চ এই দুই কর্মকর্তা সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
সাব রেজিস্ট্রার মামুন বাবর সোমবার দিনভর অফিসে আসেননি এই সংবাদ পেয়ে দুপুরের পর থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। অফিস থেকে কেউ একজন মামুন বাবরকে বিষয়টি গোপনে জানিয়ে দেন। ভয়ে তিনি আলমডাঙ্গায় কারো বাড়িতে আত্মগোপনে থাকেন।
বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে মামুন বাবর অফিসে ঢোকেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুনরায় সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তাঁরা দু‘জনে মামুন বাবরকে সরকারি নিয়মে অফিস করতে আল্টিমেটাম দেন।
তিনি বিকেলের দিকে অফিসে এলে তার জন্য গ্রাম থেকে আসা শত শত নারী-পুরুষ দিনভর অপেক্ষা করতে থাকেন। তার খামখেয়ালীপনায় মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বলেও তাকে স্মরন করিয়ে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসার।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপার বাসিন্দা মামুন বাবর আলমডাঙ্গায় সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। তিনি সপ্তাহে তিনদিন প্রতি সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার ঝিনাইদহ থেকে আলমডাঙ্গায় এসে দায়িত্ব পালন করেন।
সূত্র জানায়, সাব-রেজিস্টার মামুন বাবরের অফিসে আসার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। তিনি কোন কোন দিন আসেন দুপুরে আবার কোন কোন দিন আসেন বিকেলে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তার স্বেচ্ছাচারিতার কাছে অফিসের বেশীরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী অসহায় হয়ে থাকেন। হাতে গোনা কয়েকজনকে সাথে নিয়ে তিনি দলিল লেখকদের ওপর রীতিমত স্টিমরোলার চালান।
সূত্র জানায়, বছর দুয়েক আগে চরম স্বেচ্চাচারিতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দলিল লেখকরা মামুন বাবরের অপসারনের দাবিতে একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এতে অচালাবস্থা দেখা দেয় সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। কিন্ত মামুন বাবরের ক্ষমতার হাত দীর্ঘ হওয়ায় তাকে কেউ টলাতে পারেনি। তিনি জেকে বসেন অফিসে। এরপর থেকে তার স্বেচ্ছাচারিতা শতগুন বেড়ে যায়।
তিনি অফিসের কয়েকজন অনুগতকে সাথে নিয়ে বিরাগভাজনদের ওপর স্টিমরোলার চালাতে থাকেন। কোনদিন অফিসে আসেন আবার কোনদিন অফিসে আসেন না। গ্রাম থেকে আসা শত শত নারী-পুরুষ দিনভর অপেক্ষা করে করে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যান। তিনি কারও কাছে জবাবদিহি করতে রাজি নন। মামুন বাবরের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে শহরময় আলোচনা হতে থাকে। মামুন বাবরের অদৃশ্য শক্তির কাছে সবাই নত স্বীকার করতে থাকে। দিনের পর দিন চলতে থাকে এভাবেই।
আপনার দেওয়া আল্টিমেটামের পরেও মামুন বাবর বুধবার ১টা ১০ মিনিটে অফিসে আসেন জানালে উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন বলেন, তার ক্ষমতার হাত কতবড় লম্বা সেটা আমরা দেখব। তিনি বলেন, মামুন বাবর জানেন না, সবচেয়ে হাত বড় এদেশের জনগণের।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী বলেন, আমরা সরকারি আইনানুযায়ী সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরকে অফিসে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে বলেছিলাম। তিনি শোনেন নি। এখন আইনানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।