সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে একজন মা কতই না কষ্ট করেন। ৯ মাস ১০ দিন সন্তানকে গর্ভে রেখে নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে থাকেন। সব মায়ের প্রত্যাশা থাকে, তার নবজাতক যেন সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখে।
বর্তমান সময়ে মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অন্তঃসত্ত্বা মায়েরাও আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের গর্ভের সন্তান করোনা নিয়ে পৃথিবীতে আসেন কিনা সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে মায়েদের মধ্যে।
১৪ মার্চ ব্রিটেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মায়ের গর্ভ থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে এক শিশুর জন্ম হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, করোনা আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে সন্তান জন্মদানের আগেই ব্রিটেনে এক গর্ভবতীকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। কিন্তু তার টেস্টের রেজাল্ট আসার আগেই জন্ম নেয় এ শিশু। জন্মের পর পরই শিশুটিকেও টেস্ট করা হয়। রেজাল্ট আসে করোনা পজিটিভ।
তাই দেখা যাচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা মা ও গর্ভের সন্তানের করোনার ঝুঁকি রয়েছে। তাই এ সময়ে মায়েদের অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
আসুন জেনে নিই অন্তঃসত্ত্বা মা ও সন্তানের ঝুঁকি কতটুকু এবং ঝুঁকি এড়াতে করণীয়-
অন্তঃসত্ত্বা মা ও সন্তানের করোনা ঝুঁকি
গর্ভাবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় যে কোনো সময়ের চেয়ে ফ্লু বা অন্য কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এই সময় মায়ের বুক ও পেটের মধ্যে ডায়াফ্রাম নামক পর্দাটি ওপরের দিকে উঠে যায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই শ্বাসকষ্ট হয় গর্ভকালীন শেষ সময়ে। তাই সংক্রমণের জন্য সাধারণ মানুষের তুলনায় শ্বাসকষ্ট বেশি হতে পারে মায়েদের। গর্ভাবস্থায় কাশি–জ্বর দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপণ্ন হতে হবে।
আর শিশুর ক্ষেত্রেও করোনাভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য গর্ভপাত, শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়া, জন্মগত ত্রুটি হওয়া বা উচ্চ তাপমাত্রার জ্বরের জন্য গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে। আর তাই মায়ের থেকে শিশুর করোনা হওয়ার ঝুঁকি এড়ানো যায় না।
সব সাবধানতা অবলম্বন করবেন
গর্ভাবস্থায় সব মায়ের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। আর এখন যেহেতু করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, তাই অন্য সময়ের চেয়ে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।
১. অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই এ সময় ঘরে থাকুন ও জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। আর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ২. মার্কেট, মেলা, বিয়েবাড়ি ও গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন।
৩. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
৪. এ সময় ভ্রমণে যাবেন না।
৫. ঘরবাড়ি ও ব্যবহৃত কাপড় পরিষ্কার রাখুন। আর সংক্রমণ এড়াতে বারবার সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
৬. পশুপাখি বা কাঁচামাছ, মাংস ধরবেন না। আর ধরলেও দ্রুত সাবান–পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৭. বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হলে মাস্ক ও সুরক্ষা পোশাক ব্যবহার করুন।
পরামর্শদাতা : গাইনি কনসালট্যান্ট, সেন্ট্রাল হাসপাতাল লিমিটেড।
সুত্র-যুগান্তর