খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি অপারেশনস অ্যান্ড ক্রাইম একেএম নাহিদুল ইসলাম (বিপিএম) প্রধান অতিথির বক্তব্য বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মানুষ গরু ব্যবসার সাথে জড়িত সেটা সারা বাংলাদেশের লোক জানে। চোর-ডাকাত ছিনতাইকারী ধর্ষক ভিন্ন জগতের কেউ না। তাদের আপনার আমার মত পরিবার আছে বন্ধু-বান্ধব আছে যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে করে তারা আমাদের সমাজেরই লোক।
তিনি বলেন, একসময় সন্ত্রাসীদের অভায়ারণ্য ছিল চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়ার মধ্যে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা অন্যতম। অনেক চরমপন্থী আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের পুর্নবাসন করা হয়েছিল। কেউ কেউ পরবর্তীতে ডাকাতে পরিণত হয়েছে। তারাই এই কর্মকাণ্ড করছে তাদের সাথে আপনাদের সম্পর্ক আছে কিন্তু আপনি জানেনও না তাদের রাতের রূপ খুবই ভয়ঙ্কর। রাতে সন্ত্রাসী দিনে কৃষিজীবী। এদের সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দিবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে মুন্সিগঞ্জ জেহালা পান হাট চত্বরে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের আয়োজনে আইনশ্খৃলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা গুলো বলেন।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আশিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কনক কুমার দাস।
নাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, পুলিশের উপর আমার চরম নির্দেশ হলো তথ্যদাতার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখবেন। তথ্য দিতে গিয়ে কেউ যেন জীবননাশের হুমকি বা দৈহিক বা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। তথ্য দিতে গিয়ে কেউ যদি ভোগান্তিতে পড়ে তাহলে কেউ তথ্য দিতে এগিয়ে আসবে না। বর্তমানে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে বৈদেশিক সাহায্যের এখন আর তেমন প্রয়োজন পড়ে না।
তিনি আরও বলেন, জনগণকে সেবা দেওয়া আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। আমাদের বলা হয় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। ডাকাতির ঘটনায় যা যা করণীয় তাই তাই করা হবে। পুলিশের গাফিলতিতে একই জায়গায় পরপর ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিল না, পুলিশ ডিউটিতে থাকে, তাহলে কিভাবে ঘটনা ঘটলো। যাদের গাফিলতি আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে সকল পুলিশ সদস্যদের মোটরসাইকেল আছে তাদের তেলের ব্যবস্থা করা হবে, কোন ভাবে যেন ছিনতাই-ডাকাতি না হয়।
তিনি বলেন, পুলিশের কাজ হচ্ছে দ্বিমুখী পুলিশের মাঠ পর্যায়ে যে কাজ থানা, ফাঁড়ি, ক্যাম্প, এসপি অফিস ডিআইজি অফিস সবকিছু জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি আসামি ধরলাম কোর্টে দিলাম, বাকি কাজ কিন্তু জনগণের, জনগণের সাক্ষী দিতে হবে, অনেকেই বলে পুলিশ আসামি ধরে আবার ছাড়া পেয়ে যায়। আসামি ছাড়া পায় সাক্ষী-সাবুদ এর কারণে, কমিউনিটি পুলিশিং এর একটা স্লোগান আছে পুলিশই জনতা জনতাই পুলিশ।
সাধারণ নাগরিকদের রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে, জনগণ তথ্য দিতে বাধ্য, তথ্য না দেওয়ার কারণে অপরাধীরা বারবার অপরাধ করে যায়। পুলিশের কাছে কোন যাদু টোনা নেই, পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে। তথ্যদাতা নাম পরিচয় গোপন রাখা পুলিশের পবিত্র দায়িত্ব বলে আমি মনে করি, কোন তথ্য দাতার নাম পুলিশ বলে দিলে সে ব্যবস্থা আমরা করব, সকল পুলিশ যেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে এই আশা ও নির্দেশ রইল। তথ্য দিলে এলাকায় চরমপন্থীরা ডাকাতি করতে পারবে না। কোন অপরাধ হলে জনগণ অপরাধীকে আটক করতে পারেন। আসামীকে আটক করে নিকটস্থ থানা পুলিশে দেওয়া জনগণের দায়িত্ব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, গরু ব্যবসায়ী পান ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কমিউনিটি পুলিশিং এর স্লোগান পুলিশই জনতা জনতাই পুলিশ। এছাড়াও মুজিববর্ষে অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার।
পুলিশ সুপার বলেন, আমরা বর্তমানে জনগণের অনেক কাছে চলে এসেছি, এখন ডাকলেই জনতা পুলিশের কাছে আসে, আগেকার দিনের মতো পুলিশকে আর কেউ ঘৃণা করে না, এখন মানুষ পুলিশের কথা শোনে, পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়ে কাছে আসে। পুলিশের কাছে মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। মুন্সিগঞ্জ এলাকার কার কি পেশা বা জীবিকা কি, এলাকার মানুষ ভালো করে জানেন। ডাকাতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে।
তিনি স্থানীয় থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি সারা রাত-দিন সাংঘাতিক রকমের টহল করলেন, ডাকাতি রোধ করতে পারলেন না, এটা কোন কাজ হতে পারেনা। বিজ্ঞানে কাজের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, চাপ ও তাপ প্রয়োগে যদি পদার্থ স্থানচ্যুত হয় তাহলে বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে কাজ বলে। আপনি সারা রাতটা টহল করলেন তার পরেও দুইটা ডাকাতির ঘটনা ঘটে গেল, এটা কোন কাজ হতে পারে না, ডাকাতকে ধরতে হবে ডাকাতকে কনফার্ম ডিলিট করে দিতে হবে।
এছাড়াও তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) শামীমুর রহমান। অনুষ্ঠানে জেহালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসানুজ্জামান হান্নান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান, বাড়াদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানসহ বিভিণ্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য: গত ২২ জানুয়ারি আলমডাঙ্গার বন্ডবিল মাদারহুদা সড়কে গরু ব্যবসায়ীরা ডাকাতি কবলে পড়ে। এছাড়া ২৪ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জের সোনাতনপুর-মাদারহুদা সড়কে গরু ব্যবসায়ীরা ডাকাতের কবলে পড়ে। গত ৩ মার্চ কৃষ্ণপুর গোয়ালবাড়ি সড়কে ডাকাতির কবলে পড়ে ২ গরু ব্যবসায়ী ডাকাতদলের দায়ের কোপে মারাত্মক আহত হন।
পরপর তিনটি ডাকাতির ঘটনায় গরু ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের ব্যবসায়ী টাকা ডাকাতি করে নেয় ও মারধর করে। কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি অপারেশনস অ্যান্ড ক্রাইম একেএম নাহিদুল ইসলাম (বিপিএম), এলাকায় উপস্থিত হয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক আলোচনা সভা করেন।