মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেরাইল-জোড়পুকুরিয়া কলেজের কোটি টাকা লুটপাটের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাখে নানা অনিয়মের খবরও উঠে আসছে। গত দুই দিন মেহেরপুর প্রতিদিনে “শিক্ষক নিয়োগের কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ” ও “অন্যের জমিতে গেইট ও প্রাচির নির্মাণ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। কলেজটিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় জাহিদুজ্জামান নামের এক অসুস্থ স্টাফের এমপিও না করিয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুম উল হকের ভাগ্নে পিংকি আক্তারের এমপি করা হয়েছে। যা রীতিমত জাহিদুজ্জামানের সাথে প্রতারণার শামিল। একই সঙ্গে মানবেতর জীবন পার করছে জাহিদুজ্জামান।
সরেজমিন ও বিভিন্ন অভিযোগের মাধ্যমে জানা গেছে, ২০২১ সালে কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফার মৃত্যুর পর থেকে অনিয়ম আর দুর্নীতি ভরে গেছে কলেজটিতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতির মন মত চালানো হয়েছে কলেজটিকে। গোলাম মোস্তফার মৃত্যুর পর আওয়ামী দলীয় প্রভাষক মাসুম উল হক মিন্টুকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন তৎকালীন সভাপতি বামন্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম। ৫ জন সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে ৬ নম্বর সিনিয়র শিক্ষক মাসুম উল হককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পর থেকে শুরু হয় নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম।
মো: জাহিদুজ্জামান ২০১০ সালে কলেজটিতে অফিস সহকারী পদে যোগ দেন। জৌষ্ঠতা অনুযায়ী তার এমপিও প্রাপ্য হলেও অদ্যবধি তার এমপিও করা হয়নি। ২০২১ সালে তার স্থলে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুম উল হক তার ভাগ্নে পিংকি আক্তারের কাছে থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে তার এমপিও করান। এমপিও থেকে বঞ্চিত হয় জাহিদুজ্জমান। জাহিদুজ্জামান শারিরিক প্রতিবন্ধী হলেও এখনো জীবিকার প্রয়োজনে নিয়মিত কলেজে হাজিরা দেন এবং সকল কাজ করেন। কিন্তু তার অসহায়ত্বেও মন কাঁদেনি সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর।
এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে জাহিদুজ্জামান অঝোঁরে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, একটি জমি বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা কলেজে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু ১৪ বছর পার হলেও এখনো আমার এমপিও হলো না। সাবেক অধ্যক্ষ স্যার আমার কাগজ জমা না দিয়ে তার ভাগ্নের কাগজ জমা দিয়ে তার বেতন করিয়ে দিয়েছেন। আমাকে সাবেক সভাপতি দুই শহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, দুই লাখ টাকা নিয়ে কলেজ থেকে চলে যেতে। আমি যাইনি। আমি বলেছি আমার টাকা লাগবে না, বেতন চাই।
জাহিদুজ্জামানের দুই সহকর্মী মর্জিনা খাতুন ও কামাল হোসেন বলেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহিদুজ্জামানের সাথে অন্যায় করেছেন। আমরা একসঙ্গে কলেজে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করি। অথচ তার এমপিও করা হয়নি। আমরা তার এমপিও দাবী জানাচ্ছি। তারা আরও বলেন, জাহিদুজ্জামান খুবই অসহায় মানুষ। বেতন না পেয়ে তাকে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে।
এনিয়ে ২০২২ সালে জাহিদুজ্জামান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন ফলাফল পাননি।
কলেজের একাধিক শিক্ষক মেহেরপুর প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুম উল হক জাহিদের সাথে প্রতারণা করেছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই জাহিদের এমপিও করাতে পারতেন। কিন্তু মোটা অংকের বিনিময়ে তিনি সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলামের সাথে আতাত করে পিংকি আক্তারের এমপিও করেছেন।
সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুম উল হক বলেন, অফিস সহকারী জাহিদুজ্জামানের বিষয়ে তিনি বলেন, জাহিদুজ্জামান ডিগ্রি শাখার জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন। আর তার পরিবর্তে পিংকি আক্তারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শাখায়। পরিপত্রে কম্পিউটারের সনদ থাকার নির্দেশনা থাকায় পিংকি আক্তারের এমপিও করানো হয়েছে।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিনারুল ইসলাম বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ তার ভাগ্নের বেতন করে দেওয়ায় জাহিদুজ্জামানের টা করেননি। জাহিদুজ্জামানের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা জাহিদুজ্জামানের বেতনের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।