দামুড়হুদায় অবৈধ দলিল লেখক সমিতি নামক সিন্ডিকেটের কাছে জিন্মি জমির ক্রেতা-বিক্রিতা। সমিতি কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে অবৈধ দাবি মেনে রেজিস্ট্রার কার্যক্রম না চালানোর জন্য দামুড়হুদা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার নফিজ বিন যামান এর বিরুদ্ধে অবৈধ দলিল লেখক সমিতি উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার চত্বরে মানববন্ধন ও কলম বিরতি পালন করেছেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে এ মানববন্ধন ও কলম বিরত পালন করেন তারা।
তথ্য ও অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত সমিতির কাছে উপজেলার জমি ক্রেতা-বিক্রিতার রয়েছে অসহায়। দলিল লেখক সমিতি সিন্ডিকেট চক্র ভেঙ্গে ফেলার দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সচেতন মহল সহ জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সরকারি ভাবে জমি রেজিস্ট্রার করতে লাখে খরচ হয় ৬ হাজর থেকে ৭ হাজার টাকা। অথচ সমিতি নামক সিন্ডিকেটের দলিল লেখক সমিতি ক্রেতা-বিক্রিতাদেরকে জিন্মি করে লাখে ১০ থেকে ১৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও জমি রেজিষ্ট্রির সময় নানা অজুহাতে আরও কিছু অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অজুহাতও পুরাতন।
সমিতি নামক সিন্ডিকেটের কাছে সাধারণ জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা জিম্মি হওয়ায় সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সদস্যরা বনে গেছে লাখপতি। জমি ক্রয় বিক্রিতে সরকারিভাবে ব্যাংকে চালান করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে লাখ প্রতি খরচ নেওয়া নিয়ম রয়েছে সাড়ে ছয় হাজার ও পৌর এলাকায় সাড়ে সাত হাজার টাকা, কিন্তুু এখানে সরকারি কোন নিয়ম মানা হয় না।
এছাড়াও সমিতির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যাংকে চালান করতে আরো ২ থেকে ৫’শ টাকা বাড়তি আদায় করে নেওয়া হয়ে থাকেন। এছাড়াও প্রতি লাখে যেখানে সর্বোচ্চ রেজিস্ট্রি খরচ সাড়ে আট হাজার টাকা, সেখানে ১০ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে যা সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা ও নিয়ম বর্হিভূত।
উপজেলা সদর সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমি ক্রেতা বিক্রিতাদের কষ্টের অর্জিত অর্থ জমি ক্রয় বিক্রির সময় হাতিয়ে নিয়ে আসছেন এ দলিল লেখক সমিতি সিন্ডিকেট চক্ররা ।
এসকল অবৈধ অর্থ সমূহ দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা সপ্তাহে যা দলিল রেজিষ্ট্রি হয় তা থেকে অর্জিত অতিরিক্ত অর্থ সপ্তাহে একদিন মিটিং করে ভাগপাটোয়ারা করে নিয়ে আসছে।
দামুড়হদা উপজেলরা সদর ইউনিয়ন একজন ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদক কে জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে আমি দামুড়হুদা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির মাধ্যমে ৩ লাখ টাকার দলিল করে জমি রেজিষ্ট্রি করি। যেখানে সমিতির পক্ষ থেকে আমার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়।
আমি সরকারি নিয়মের কথা বলি যে সেখানে তো এতো টাকার কথা বলা নেই। একপর্যায়ে আমার সাথে দলিল লেখকদের কথাকাটাকাটিও হয়। তবুও শেষ পর্যায়ে অনেকটা আমাকে বাধ্য হয়ে অসহায়ের মতো দলিল লেখক সমিতির মাধ্যমে তাদের কে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রার করতে হয়েছে।
এবিষয়ে জমি ক্রয় বিক্রয়কারী সহ সচেতন মহলের অনেকেই বলেন, যিনি জমি কিনবেন বা বিক্রি করবেন তাদের কাছে অবৈধভাবে বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখ জনক ঘটনা। যিনি জমি কিনবেন বা বিক্রি করেন উভয় কষ্টের মধ্যে দিয়ে তারা সমাপ্ত করে থাকেন।
অবৈধ দলিল লেখক সমিতির সিন্ডিকেট চক্র খুবই শক্তিশালী। একজন দলিল লেখক লাখে বেশি চাইলে অন্য এক দলিল লেখকের নিকট জমির রেজিস্ট্রার কার্যক্রম সম্পন্ন করবো সে সুযোগও নাই। বিধায় একজন লাখে ১০-১৬ হাজার বললেও অন্য একজনের কাছে গেলেও খুব বেশি হলেও ৫ ‘শ থেকে ১ হাজার টাকা কম নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন সমিতি। যে ধরণের সমিতি মানুষের কল্যাণে আসেন না তা থাকার চাইতে না থাকায় ভালো।
ফলে এ ধরনের অবৈধ সিন্ডিকেট চক্র ভেঙ্গে জমি ক্রয় বিক্রয় যাতে সুন্দর ও সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে পারেন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষ সে ব্যবস্থা গ্রহণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সু ব্যাবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশা করি।
দামুড়হুদা সাব রেজিস্ট্রার এম নফিয বিন যামান এর সাথে কথা বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে সমিতির নেতৃবৃন্দ আমাকে বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে দলিল সম্পাদনের জন্য চাপ দিতে থাকে।
আমি এধরণের অন্যায় ও সরকারি নির্দেশনার বাহিরে যেতে পারবো না বা সুযোগ নাই বলে তাদের অবৈধ মতামতে প্রতিবাদ করি। ফলে তারা আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করা শুরু করেছে।
আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে সরকারি নির্দেশনার বাহিরে যাবো না বা যাওয়ার কোন সুযোগ নাই।একজন মানুষ তার সম্পদ বিক্রয় করেন অতিব প্রয়োজনীয় কাজে তেমন ভাবে আবার যিনি ক্রয় করেন তিনিও তার কষ্টের অর্জিত উপার্জনের অর্থ থেকে জমি ক্রয় করে থাকেন। ফলে তিনি কেন সরকারি নির্দেশনার বাহিয়ে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে কেন জমি ক্রয় করবেন।