মলদ্বারে সাধারণত তিনটি রোগ হয়ে থাকে। পাইলস, ফিস্টুলা ও এনাল ফিশার। অনেকে এই তিনটিকে এক মনে করে ভুল করে বসেন। এগুলোর প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা উপসর্গ ও জটিলতা আছে। পাইলসের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, মলদ্বারে মাংসপিণ্ড ফুলে ওঠা, যা কখনও কখনও মলদ্বারের বাইরে ঝুলে পড়ে এবং হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হয়। এ রক্ত সাধারণত টাটকা লাল হয়।
পায়ুপথের রোগ নিয়ে রোগীরা কোনো কোনো সময় নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। মলদ্বারের ভেতর বিশেষ ধরনের পরীক্ষা যেমন কোলনস্কপি ছাড়া কারও পক্ষে সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
পাইলস রোগের চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচারের পর আবারও পাইলস দেখা যায় কিনা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের বৃহদান্ত ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক।
আধুনিক প্রযুক্তির ফলে অপারেশন ছাড়াই বেশিরভাগ পাইলস রোগীর চিকিৎসা সম্ভব। এ পদ্ধতির নাম হচ্ছে রিং লাইগেশন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসার ফলে এখন ৮০-৯০ ভাগ পাইলস রোগী অস্ত্রোপচার ছাড়াই ভালো হচ্ছেন।
রোগীরা জিজ্ঞাসা করেন, শুনেছি পাইলস অপারেশন করলে আবার হয় তাই আর অপারেশন করে লাভ কী? এক কথায় এর উত্তর দেওয়া যায় না। রোগীদের এ প্রশ্নর উত্তর দেয়ার আগে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস পর্যালোচনা করা দরকার।
রেকটাম ও মলদ্বারের অনেক রোগ আগের যুগে অস্ত্রোপচার করে ভালো করা দুষ্কর ছিল। পাইলস বা ফিস্টুলা অপারেশন করলে আবার হওয়াই ছিল নিয়ম।
সাধারণ রোগীরা মলদ্বারের তিনটি রোগকেই পাইলস বলে মনে করেন। এসব রোগের চিকিৎসার পর যখন কোনো সমস্যা হয় তখন তারা পাইলস আবার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে পাইলস বা হেমোরয়েড বলে সেটি অপারেশনের পর আবার হওয়ার আশঙ্কা শতকরা ২ ভাগ।
বেশিরভাগ রোগী যারা পাইলস আবারও হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা এটি বলতে সাধারণত বোঝান মলদ্বারে বাড়তি ত্বক বা মাংসপিণ্ড অথবা চুলকানি হয়েছে এটিকেও কেউ কেউ পাইলস হয়েছে বলে ধরে নেন। এ সমস্যাগুলো দ্বারা পাইলস আবার হয়েছে বোঝায় না। মলদ্বারের চুলকানি বিভিন্ন রোগের একটি লক্ষণ মাত্র।
শতকরা ২ ভাগ ক্ষেত্রে হলেও পাইলস আবার হতে পারে। ব্যাপারটি কি করে ঘটে তা বোঝাতে বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন। এ ব্যাপারটি ঘটার পেছনে অপারেশনের একটি কৌশলগত কারণ রয়েছে। অপারেশনের সময় যে শিরাগুলো স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল পরবর্তী সময়ে মলদ্বারে চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অথবা কোলেটারাল রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কয়েক বছর পর এগুলো পাইলস আকারে দেখা দিতে পারে।
এছাড়া পাইলস যখন খুব বড় হয় তখন মনে হয় মলদ্বারের চতুর্দিকের সব এলাকাই পাইলসে ভর্তি। তখন একজন সার্জনের মনে হয় সব স্ফীত অংশই কেটে ফেলে দিতে হবে নইলে পাইলস থেকে যাবে। যদি এভাবে সবকিছু কেটে ফেলে দেওয়া হয় তাহলে মলদ্বার সংকুচিত হয়ে মলত্যাগে বাধা সৃষ্টি হবে।
এ ক্ষেত্রে সঠিক কৌশলটি হচ্ছে দুটি পাইলসের মাঝখানে আমাদের বাধ্যতামূলকভাবে কিছু ঝিল্লি ও ত্বক সংরক্ষণ করতে হবে। যেহেতু এর তলদেশে পাইলসের শিরাগুলো বিস্তৃত থাকে তাই ঝিল্লির তলদেশ থেকে সতর্কতার সঙ্গে এ শিরাগুলোকে কেটে নিয়ে আসতে হবে।
এ কৌশল অবলম্বন করলে পাইলসের শিরাগুলো যেমন সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা সম্ভব, তেমনি দুটি পাইলসের মধ্যবর্তী ঝিল্লি এবং ত্বকও সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে, যাতে মলদ্বার সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না।
অপারেশনের পর অল্প কিছু ক্ষেত্রে যখন আবারও পাইলস দেখা দেয়, তখন এগুলোর উপসর্গ ততটা তীব্র হয় না। এটিকে তখন বিনা অপারেশনে রিং লাইগেশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা সম্ভব। সাধারণত আবার অপারেশনের প্রয়োজন হয় না।