হঠাৎ সবজি বাজারে দামের তাপে পুড়ছেন ক্রেতা। কয়েকটি সবজির দাম হয়ে গেছে দ্বিগুণ। অনেক কাঁচা তরকারির কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। এর মধ্যে বড় গোল বেগুন কেনাবেচা হচ্ছে অস্বাভাবিক দামে; এক কেজি কিনতে গুনতে হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা। সবজির পাশাপাশি আবারও চড়েছে ডিমের বাজার। দুই দিনের ব্যবধানে ডজন উঠেছে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায়। হঠাৎ সবজি ও ডিমের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, সম্প্রতি টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কৃষক সবজি তুলতে পারেননি। ফলে ক্ষেতে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক সবজি। এ কারণে মাঠ পর্যায় থেকে শহরে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। তাতে চাহিদার চেয়ে সবজির জোগানে দেখা দিয়েছে ঘাটতি। এতে তেতে উঠেছে সবজির দাম। আবার কিছু ব্যবসায়ী বৃষ্টির সুযোগও নিচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের এসব যুক্তিতে ত্যক্ত-বিরক্ত ক্রেতারা। তারা বলছেন, একেকবার একেক ছুতায় জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই বলে ব্যবসায়ীরা যে যার মতো করে দাম নিচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। গতকাল মঙ্গলবার কুষ্টিয়া শহরের পৌর বাজারে ১০০ টাকা দরে বেগুন কেনার পর বেসরকারি চাকরিজীবী আবুল হোসেন বলেন, ‘বাসার পাশে মঙ্গলবাড়ীয়া থেকে না কিনে পৌর বাজারে এলাম। এখানেও সেই একই দর। দুই দিনের বৃষ্টিতে দাম আকাশচুম্বী হবে কেন? সবজি তো আমদানি করতে হয় না।’
মজমপুরে রাতের কাঁচাবাজারে সবজি কেনার পর জামেনা বেগম বলেন, ‘সবকিছুর দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এতে কম আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ছে।’
আজ শহরের মিউনিসিপ্যালিটি বাজার, রাজারহাট, মঙ্গলবাড়ীয়া, চৌড়হাস কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে শুধু পেঁপে আর আলু ছাড়া ৬০ টাকার কমে কোনো সবজি পাওয়া যায়নি। তিন-চার দিন আগে কুষ্টিয়ায় ঢ্যাঁড়সের কেজি ৪০ ও গোল বেগুনের কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দ্বিগুণ দাম বেড়ে বাজারে এখন সবজি দুটি বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৬০ থেকে ৭০ ও ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। এ ছাড়াও শসা ৫০ টাকা কেজি, কচু ৮০-১০০ টাকা কেজি, ওল ৭০ টাকা কেজি, পেয়াজ ৮০-১০০ টাকা কেচি, রসুন ২০০ টাকা কেজি, কাঁচামরিচ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।
গত শুক্রবার বরবটির কেজি ছিল ৪০ টাকা। কেজিতে তা বেড়ে এখন ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে পটোল ও চিচিঙ্গা কেজিতে ২০ টাকা করে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। তিন দিন আগে করলা, ধুন্দুল ও ঝিঙ্গের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কেনা গেছে। এখন গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। নতুন সবজি হিসেবে শিমের দাম এমনিতেই বেশি; কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। ছোট একটা ফুলকপি কিনতে গেলেও ক্রেতাকে খরচ করতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। প্রতিকেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা এবং বাধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি, গাজর ১৫০ টাকা কেজি, আদা ২০০ টাকা কেজি, করলা ৮০ টাকা কেজি, লাউ ৪০-৬০ টাকা পিস এবং মিষ্টি কুমড়া কেজিপ্রতি ৪০ -৫০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মুলার চাহিদা কম থাকে, সেটির কেজিও এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কম দামের সবজি বলতে এখন শুধু পেঁপে মিলছে কেজি ২৫-৩০ টাকা কেজি। কলমি শাক ১০ টাকা আটি, লাল শাক ২০ টাকা আটি এবং পুইশাক ৩০ টাকা আটিতে বিক্রি হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আলুর দর নিয়ে হয়েছে বেশ হইচই। দামও বেঁধে দেয় সরকার। তাতেও সুফল মেলেনি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দর ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে।
মজমপুরের কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. মতিয়ার বলেন, ‘পৌরবাজারে পাইকারদের কাছে বেগুনের দাম শুনেই অবাক হলাম। দুই দিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ দাম নিয়েছে। সকালে পৌর বাজারে গেলে সবজির দরকষাকষির সুযোগ থাকে না। কারণ কাঁচামাল কম আসে বাজারে।’
একই বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. কারিবুল বলেন, বৃষ্টির ছুতায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। এ কারণে শুধু ক্রেতা নয়, খুচরা বিক্রেতারাও পড়েছে বিপদে।
তবে বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ব্যাপারীরা বাজারে সবজি কম আনছে বলে দাবি করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
পৌর বাজারের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী সুদেব বলেন, বৃষ্টিতে সবজি তোলা সম্ভব হয়নি। এতে ক্ষেতে পঁচে গেছে অনেক সবজি। কৃষক পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণে ব্যাপারীরা সবজি কম আনছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে