‘আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করার প্রতিবাদ করছি না। প্রতিবাদ করছি যারা কোন কাগজ না থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে (ক) তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে। এভাবেই কিছুদিন আগে একজন অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর চেষ্টার প্রতিবাদ করতে যেয়ে ইউএনও অফিসে আমি হেনস্থার শিকার হয়েছি।‘
মেহেরপুরে ৪৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে কথাগুলি বলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অবঃ ক্যাপ্টেন আব্দুল মালেক।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘২০১৭ সালে মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের জেলা ও উপজেলা কমান্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এরপর থেকে জেলা প্রশাসক ভারপ্রাপ্ত জেলা কমান্ডার এবং ইউএনও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সেই থেকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কোন মুক্তিযোদ্ধা সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানালে, আর তারা আমাদের সামনে এসে চেয়ারে বসলে সেটা আমরা মেনে নেব না। ব্যাপারটি নিয়ে আমি আগেও প্রতিবাদ করেছি, ভবিষ্যতেও এর প্রতিবাদ করব।‘
গতকাল মঙ্গলবার সকাল এগারটায় মেহেরপুর সদর উপজেলার সাধু বার্নবার চার্চে মিলনায়তনে কোরআন তেলয়াত, গীতা পাঠ ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহনে এই শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাপ্টেন আব্দুল মালেকের (অবঃ) সভাপতিত্বে ও ইঞ্জিঃ মোঃ নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় শান্তি সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করে বলেন আমরা দেশকে স্বাধীন করেছিলাম শুধু ভালোবেসে। পাকিস্তানের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এই দেশ স্বাধীন করেছিলাম, আজ সেখানে আমরাই পরাধীন। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তারাই আজ বড় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা ভাতা পায়। বড় বড় চেয়ার পায়। সরকারি দলের নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকে। তাদের মতের বিরুদ্ধে কথা বললে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, শহীদ হয়েছে তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জামায়াত-শিবির আক্ষায়িত করে কটাক্ষ ও অপমানিত করে।
মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সুলতান আহমেদ বলেন, আজ স্বাধীনতার ৫২ বছর পর যদি নতুন নতুন পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করা হয় তবে কিয়ামত পর্যন্ত একই পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হতেই থাকবে।‘
মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কোন নেতার ডাকে আমি মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। শান্তি ও স্বাধীনতার জন্য আমরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। ২০ হাজার টাকা ভাতা পেতে আমি মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এই ভাতার জন্যই এখন মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৩-৪ টি দল হয়ে গেছে।‘
শান্তি সম্মেলনে আলোচনা সভার সঞ্চালক ইঞ্জিঃ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছুই করেছে, ভবিষ্যতে আরও করবে। বিষয়টা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।আমরা কোন নেতার পক্ষ নেব না। যে নেতা নৌকা নিয়ে আসবে তার পক্ষেই থাকবো। কিন্তু আফসোস আজ পর্যন্ত মেহেরপুরের কোন এমপি বা মন্ত্রি আমাদের ডেকে, একসাথে বসে কখনো কথা বলেনি। এমনকি আমাদের সমস্যার কথা শোনার ইচ্ছাও পোষণ করেনি।‘