আজ ৪ ডিসেম্বর দামুড়হুদা জেলার দর্শনা শত্রু মুক্ত দিবস। জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে বাংলার ছেলেরা পাক-বাহিনীর সাথে তুমুল লড়াই করে দর্শনাকে মুক্ত করে।
মুক্তিযোদ্ধা বিল্লাল হোসেন জানান, সেদিন ৩ ডিসেম্বর সন্ধা সাড়ে ৬টা চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বারাদি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে খবর আসে দর্শনার উত্তর-পশ্চিম পাশে পাক-হানাদার বাহিনী বাংকার করে অবস্থান নিয়ে আছে।
এ খবর পেয়ে ভারতীয় প্রায় ৬/৭ শত মিত্র-বাহিনী ও ৩০জন মুক্তিযোদ্ধা রাতের খাবার শেষ করে পায়ে হেঁটে মদনা, প্রতাপপুর ও জিরাট পার হয়ে রওনা হয় যুদ্ধক্ষেত্রে।
মিত্র-বাহিনীর নেত্রীত্বে ছিলেন মিষ্টার বুফে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নেত্রীত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা মৃত নুর হাকিম। দীর্ঘ প্রায় ৭/৮ কিলো মিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলার গোবিন্দপুর ও রুদ্রনগরের মাঝামাঝি স্থানে রাবারের নৌকায় চেপে ৮জন করে যোদ্ধা মাথাভাঙ্গা নদী পার হয়ে রাত ২টার দিকে লোকনাথপুর ও পরানপুর মাঝামাঝি ধাঁপাড়ী ও তালবাগান মাঠে ট্রেন্স (এপিপি) কেটে অবস্থান নেয়। এরপর রাত ৪টা দিকে পাক-হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বৃষ্টির মত মটার গান, সেল, এস এমজির রটেক ল্যান্সার ও রাইফেলের গুলি বর্ষন শুরু করে।
এসময় মুক্তিযোদ্ধা টীম ও মিত্র-বাহিনী পাল্টা গুলি বর্ষন শুরু করে।
এসময় ৩ঘন্টা ব্যাপী উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল গুলাগুলি হয়। এক পর্যায় মক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা পাক-হানাদার বাহিনীর এ্যাম্বুসে পড়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে একের পর এক গুলি, মটারগান, রকেট ল্যান্সার, এল এম জি, এস এলার, এস এম জি, এইচ এস জি, মার্কফোর রাইফেল ও সেল নিক্ষেপ চলতে থাকে।
এসময় ভারতীয় ৩টি যুদ্ধ বিমান কয়েকবার আকাশে চক্কর দিতে শুরু করলে পাক-হানাদার বাহিনী পিছু হঁটতে শুরু করে। সূর্য্যরে আলো ফোঁটার আগেই দর্শনা মুক্ত হয়ে যায়।
এরপর ৪ ডিসেম্বর সাকাল ৭টায় জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে দর্শনাকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করে ফেলে।
এরপর দর্শনা কেরু চিনিকলের জেনারেল অফিসের সামনে মিত্র-বাহিনীর প্রধান মিষ্টার বুফে ও মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ প্রধান মৃত নুর হাকিমের নেত্রীত্বে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করে এবং জয় বাংলা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখোরিত করে নিজ মাতৃভূমির একাংশ নিজেদের দখলে নেয় মুক্তি-বাহিনী।
সেই থেকে ৪ ডিসেম্বর দর্শনা মুক্ত দিবস হিসাবে দর্শনাবাসঅ পালন করে আসছে।
এ যুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনী ও মিত্র-বাহিনীর অসংখ্য সৈন্য মারা যায় বলে বিল্লাল হোসেন জানান।
-আহসান হাবিব মামুন, দর্শনা