বাণিজ্যিকভাবে আমবাগান করে লাভবান হয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মশান গ্রামের এসএম জামাল। মাত্র আড়াই বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আমবাগান করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে এলাকার বেকার যুবকদের কাছে অনুসরণীয় হয়ে উঠেছেন তিনি।
এলাকার অনেক হতাশাগ্রস্ত বেকার যুবক এখন তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আমাবাগান তৈরির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তার বাগানে আম্রপালী, মল্লিকা, হাঁড়ি ভাঙা ও হিমসাগর জাতের ২ শতাধিক গাছ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, তার বাগানে প্রায় গাছেই ঝুলছে থোকা থোকা আম। আমের ঘ্রাণে মাতোয়ারা গোটা বাগানজুড়েই।
বাগানে বেশিরভাগ রয়েছে আম্রপালি। কয়েক দিন পরেই বাগান থেকে সংগ্রহ করা হবে বলে জানান সেখানে কর্মরত আরিফুল ইসলাম। এসএম জামাল জানান, সাংবাদিকতার পাশাপাশি কিছু একটা করতে হবে বলেই এই বাগান করা।
এছাড়াও কৃষি বিষয়ক প্রতিবেদন করতে গিয়ে অনেক সফলতার গল্প তুলে আনায় আমার বাগান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, গেলো বছর থেকে করোনাকালীন সময়ে বেকার থেকে উত্তরনের পাথেয় হিসেবে অনলাইনে আম বিক্রি করে কিছুটা হলে লাভবান হয়েছি।যার ধারাবাহিকতায় এলাকার একটা আড়াই বিঘার আম বাগান তিন বছরের জন্য লিজ গ্রহন করি। গেলো এক বছর ধরে আমবাগান পরিচর্যা করার ফলে প্রায় গাছেই আম এসেছে।
বিগত ২০০৮ সালে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখানে গবাদিপশু পালন, মৎস্য চাষের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ফলজ বাগান তৈরি, হাঁস-মুরগি পালন ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ প্রশিক্ষণ থেকেই তিনি বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরির ধারণা লাভ করেন। তবে তার বাড়ীর পাশে কয়েকবছরের একটি বাগান অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখে তারা কয়েকজন এ বাগানটি তিন বছরের জন্য লিজ গ্রহন করে।
এসএম জামাল নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তার প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান বেকার যুবকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে আত্মতৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছেন। এবছর বাগানে প্রায় সব গাছগুলো থেকেই ফল দেওয়া শুরু করেছে। এবার প্রায় এক লাখ টাকার আম বিক্রি করবেন। ফর্মালিন ও অন্যান্য কেমিক্যাল ব্যবহার না করেই মানুষ কে বিশুদ্ধ আম খাওয়ানোর উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি এ বাগান পরিচর্যা করে আসছেন।
এ ছাড়া তিনি প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আমবাগানের মধ্যে ডাঁটাশাক ও পাশে অন্যান্য সবজি এবং পাশে একটি পুকুরে মাছ চাষ ও হাঁস-মুরগি পালনের সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলবেন। এসএম জামাল জানান, চাকরি নামের সোনার হরিণের পিছনে না ছুটে কিংবা জমি বিক্রি করে বিদেশে না গিয়ে ওই জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আমবাগান বা কৃষি খামার করে একজন ব্যক্তি সহজেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন। এছাড়াও এখন অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রি করতে পেরেও কয়েকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বাগানে ঘুরতে আসা বিপুল হোসেন, আক্তার হোসেন, রুহুল আমিন জানান, বাগান থেকে আম পাড়ার মজাই আলাদা।
তাই এই বাগানে এসে ঘুরে ঘুরে আৃ পাড়তে পেরে খুব ভালো লাগছে। তারা আরও বলেন, আমবাগান থেকে বিষমুক্ত আম সংগ্রহ করে পরিবার পরিজনদের খাওয়ার পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনদেরও কাছেও পাঠাবো। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, উপজেলায় বেশ কয়েকটি আমবাগান রয়েছে। যারা বাণিজ্যিক ভাবে আম চাষ করে থাকে। এখানকার আমের স্বাদও ভালো। এ উপজেলার মাটিও বেশ উপযোগী। এ কারণে এখানে প্রতিনিয়ত বাণিজ্যিকভাবে আম চাষের পরিধি বাড়ছে।