করোনাভাইরাসের বিস্তারের সুযোগ নিচ্ছে সাইবার জগতের চোরের দল। করোনার কারণে অনেকেই এখন বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করছেন। এই সুযোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টায় আছে দুর্বৃত্তরা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত মাসে কয়েকটি দিক বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বড় বড় করপোরেশনে দ্বিগুণ হারে আক্রমণ করেছে সাইবার দুর্বৃত্তরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করপোরেট নিরাপত্তা দলকে তথ্য সুরক্ষার জন্য কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। অনেকে বাড়ির কম্পিউটারে বসে কাজ করছেন, ফলে সেটআপে ভিন্নতা থাকছে এবং প্রতিষ্ঠানকে দূরে সেসব কম্পিউটারে সংযুক্ত থাকতে হচ্ছে। দূরে বসে কর্মীরা ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কস (ভিপিএনএস) ব্যবহার করছেন, যা সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
সফটওয়্যার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ভিএমওয়্যার কার্বন ব্ল্যাকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্যস্ত থাকায় মার্চ মাসে র্যানসমওয়্যার আক্রমণ তার আগের মাসের তুলনায় ১৪৮ শতাংশ বেড়েছে।
ভিএমওয়্যারের সাইবার নিরাপত্তা কৌশলী টম কেলারম্যান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির পেছনে ডিজিটালি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটছে। পেছনে সাইবার অপরাধের মহামারি চলছে। সত্যি কথা বলতে, করপোরেট পরিবেশের বাইরে দূরে বসা কোনো ব্যবহারকারীকে হ্যাক করা সহজ। ভিপিএন কোনো বুলেটপ্রুফ নিরাপত্তাব্যবস্থা নয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নেটওয়ার্ক সেন্সরকারী প্রতিষ্ঠান টিম সাইমরু থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন ফিনল্যান্ডের আর্কটিক সিকিউরিটির বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা দেখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেটওয়ার্কে ক্ষতিকর কার্যক্রমের পরিমাণ গত মার্চ মাসে দ্বিগুণ হয়েছে। জানুয়ারি মাসের তুলনায় ইউরোপের বিভিন্ন নেটওয়ার্কে ক্ষতিকর কার্যক্রম বেড়েছে। চীনে করোনাভাইরাসের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে ভাইরাসের বিস্তারও বেড়েছে।
আর্কটিকের বিশ্লেষক ল্যারি হুটুনেন বলেন, যখন কম্পিউটার বাড়িতে নেওয়া হয়, তখন নিরাপদ যোগাযোগের জন্য নিয়ম হিসেবে বিতর্কিত ওয়েব ঠিকানা যত দূর সম্ভব এড়াতে হবে। এর অর্থ আগের অনেক নিরাপদ নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে করপোরেট ফায়ারওয়াল বা নিরাপত্তা নীতিমালার কারণে পিসি সুরক্ষিত থাকে। অফিসের বাইরে এ নিরাপত্তাব্যবস্থা কমে যায়। তখন ভাইরাস থাকে মেশিনের সঙ্গে সাইবার দুর্বৃত্তরা দূরে থেকে যোগাযোগ করতে পারে।
ডিএইচএস সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার সিকিউরিটি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন সংস্থা ভিপিএন ব্যবহার করছেন যাতে আরও বেশি ঝুঁকি পাওয়া যাচ্ছে এবং ক্ষতিকর সাইবার দুর্বৃত্তের নিশানায় পড়তে হচ্ছে। ভিপিএনের নিরাপত্তা ঠিক রেখে হালনাগাদ করা কঠিন।
অন্যান্য সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলছেন, আর্থিকভাবে লাভের আশায় থাকা সাইবার চোরের দল এখন করোনাভাইরাস মহামারির ভয়কে কাজে লাগিয়ে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছে। টেক জায়ান্ট গুগল বলছে, শুধু গত সপ্তাহে ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি ম্যালওয়্যার ও ফিশিং মেইল দেখেছে তারা। এসব মেইল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-সংক্রান্ত স্ক্যাম মেইল। গুগল জানিয়েছে, তাদের দৈনিক ২৪ কোটি স্প্যাম মেসেজের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রচুর স্ক্যাম মেসেজ যুক্ত হয়েছে। সূত্র-প্রথম আলো