আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি গ্রামের কৃষক আবু জাফর এবার ৭ বিঘা জমির আমনের খেতে সাম্প্রতিক বিভিন্ন পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আবু জাফর বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পরামর্শে খেতে আলোক ফাঁদ ব্যবহার শুর” করেছি।’ বেলগাছি গ্রামের কৃষক নজর”ল ইসলাম বলেন, ‘আমি পাঁচ বিঘা জমিতে এবার আমন ধানের চাষ করেছি। এক-দুদিন পরপর কীটনাশক স্প্রে করেও পোকা নিধন করা যাচ্ছে না। এতে লোকসান গুনতে হতে পারে। একারণে অবশেষে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।’
এসব পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে উপজেলায় চলতি আমন খেতের পোকার আক্রমণ থেকে সুরক্ষায় আলোক ফাঁদ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এসব ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তা দমন করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কৃষকেরা ইতিমধ্যে উপজেলার ৩০ টি ব্লকে আলোক ফাঁদ স্থাপন করেছেন। এছাড়া পযায়ক্রমে আরও ১৬ টি আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হবে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৬ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে এবছর আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন পর গাছে থোড় আসবে। এই সময়ে ধানে বাদামি ঘাস ফড়িং, সবুজ ঘাস ফড়িং, পাতামোড়ানো পোকা, গান্ধী পোকা, মাজরা পোকাসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করে।
পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করতে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আমনখেতে আলোক ফাঁদ ব্যবহার শুর” করা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে চলবে এ কাযক্রম। কৃষি সম্প্রসারন দপ্তর ১০টি ব্লকে আলোক ফাঁদ স্থাপন করেছে। অবশিষ্ট ৩৬ টি ব্লকে কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় কৃষকেরা এই আলোক ফাঁদ স্থাপন করেছেন। এ মৌসুমে আলোক ফাঁদের সংখ্যা ৪৬ ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর তুলনায় এবছর আলোক ফাঁদ স্থাপন বেশী স্থাপন করা হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানাগেছে।
উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণের এক কর্মকতা বলেন, রাতের বেলায় খেতে বৈদ্যুতিক বাল্ব টানানো হয়। বাল্বের নিচে পাত্র রাখা হয়। পাত্রের মধ্যে ডিটারজেন্ট বা কেরোসিনমিশ্রিত পানি থাকে। আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় আলোর কাছে আসে এবং পাত্রের পানির মধ্যে পড়ে মারা যায়। ওই পোকামাকড় দেখে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। একটি খেতে তিন দিন এই আলোক ফাঁদ রাখতে হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভিন বলেন, পোকার আক্রমণে যাতে ফলনে প্রভাব না পড়ে, সে জন্য এবার আগে থেকেই বেশিসংখ্যক আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ব্যয় একেবারেই কম। ইতিমধ্যে উপজেলার সব ব্লকে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে।