চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় মোটরসাইকেলসহ যুবক সবুজকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যার মাস্টারমাইন্ডসহ দু আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে গ্রেফতারকৃত আসামী সাগর। গতকাল দুপুরে আদালতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
এদিকে, নৃশংস এ হত্যাকান্ডের মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে জঘন্য এ হত্যাকান্ডে জড়িত মাস্টারমাইন্ডসহ দুজনকে গ্রেফতার করে হত্যা রহস্য উন্মোচনের সাফল্য অর্জন করায় প্রশংসায় ভাসছেন আলমডাঙ্গা -চুয়াডাঙ্গা পুলিশ প্রশাসন। তবে, আসামীরা কী ধরণের স্বীকারুক্তি দিয়েছেন সে ব্যাপারে তথ্য,দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে পুলিশ। আজ ১৫ নভেম্বর পুলিশের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিং দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, বাদেমাজুর যুবক সবুজ হত্যাকান্ডের কয়েক ঘন্টার মধ্যে পুলিশ ৪ সন্দেহভাজনকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখে। এদের মধ্যে নিহত সবুজের সাবেক ব্যবসায়ী পার্টনার একই গ্রামের সৈকত, বর্তমান পার্টনার বন্ডবিল গ্রামের জিহাদ ও গোবিন্দপুর গ্রামের রঙমিস্ত্রি রাহাতের ছেলে মোটরসাইকেল মেকানিক সাগরকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আলমডাঙ্গা ফুড গোডাউনের নৈশপ্রহরী জহুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। জহুরুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে।
ওয়াকিবহালসূত্র জানিয়েছে — দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের নিকট মুখ খোলেন দুজন সাগর ও জহুরুল। তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। অন্য দুজনের এ হত্যাকান্ডে পুলিশ সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি। তবে এখনই এ দুজন সন্দেহমুক্ত নন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুজনের মধ্যে সাগর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। নিজেকে ওই হত্যাকান্ডে জড়িত করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন বলে জানা যায়।
আদালতে প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, চাঁদাবাজি করতে গিয়েই এ নৃশংস হত্যাকান্ডের সূত্রপাত। সবুজ ইতালি চলে যাবেন। মোটরসাইকেল কেনাবেচার ব্যবসা করেন। তাছাড়া, টিভিএস ১২৫ সিসি মোটরসাইকেল বিক্রির কথা চলছিল। তার নিকট থেকে সব টাকা হাতিয়ে নিতেই ঘাতকরা অপারেশন চালান।
আলমডাঙ্গার একাধিকসূত্রে জানা যায় – খাদ্যগুদামের নৈশপ্রহরী হওয়ার সুবাদে জহুরুল ইসলাম উপজেলা গেটের সামনের সরকারি গোডাউনের কোয়ার্টারে সপরিবারে বসবাস করতেন। হত্যাকান্ডের দুদিন আগে রাতে এ ফুড গোডাউনের ভেতরে জহুরুল সাগরসহ বেশ কয়েকজন যুবককে নিয়ে মিটিং করেন। সেই মিটিং-এ সবুজসহ বেশ কয়েক জনের নিকট চাঁদাবাজির সিদ্ধান্ত নেন। এ কাজে প্রয়োজনে খুন করতেও পিছুপা না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
হত্যার পূর্বে তারা সবুজের সাথে অন্তরঙ্গ আচরণ শুরু করেন। এভাবেই বন্ধুত্বের ফাঁদ পাতেন। তাদেরকে আলমডাঙ্গার অনেকেই একসাথে পুরি ও ফুচকা খেতে দেখেছেন। অনেকে দাবি করেছেন যে ঘটনার রাতে পোয়ামারী গ্রামে গিয়ে তারা এক সাথে বাউল গান শুনেছেন।
এক পর্যায়ে ঘটনার স্থলে নির্জন বাগানে নিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। এ ঘটনার এক পর্যায়ে ঘাতকচক্র নিরীহ যুবক সবুজকে পিটিয়ে হত্যা করে।
পরে, এ হত্যাকান্ডের আলামত বিনষ্ট করতে তারা সবুজের লাশের উপর তার নিজের মোটরসাইকেল রেখে আগুন জ্বেলে দেওয়া হয়। আগুনের লেলিহান শিখায় মেহগনি বাগান উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ভয় পেয়ে ঘাতকচক্ত দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে পারেন। প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গা উপজেলার গড়চাপড়া-কাশিপুর সড়কের গজারিয়া মাঠের বিজন মেহগনি বাগান থেকে পুলিশ ১৩ নভেম্বর সকালে মোটরসাইকেল চাপা দেওয়া অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তিন যুবককে থানায় নিয়ে গেছেন।
নিহত যুবকের নাম সবুজ আলী (২১)। তিনি উপজেলার বাদেমাজু গ্রামের গরু ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনের ছেলে। তিনি পুরাতন মোটরসাইকেল ক্রয়বিক্রয় ব্যবসা করতেন। ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় সবুজ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন জনৈক অনিকের ফোন পেয়ে। পরে রাতে আর বাড়ি ফেরেননি। নিহত সবুজের বোন জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে সবুজের মোবাইলফোনে রিং হচ্ছিল। সে সময় সবুজের মা রিং রিসিভ করতে যেতে চাইলে সবুজ নিজেই গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে বের হন। ১২ নভেম্বর বিকেলে এক ব্যক্তি নিজেকে অনিক নামে পরিচয় দিয়ে সবুজকে ফোন করে মোটরসাইকেল কেনার জন্য দেখা করতে বলে। সবুজ তখন তার সাথে কথা বলতে বলতে বের হয়ে যান। পরে আর বাড়ি ফেরেন নি।
এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে গতকাল ১৪ নভেম্বর এজাহার দায়ের করেছেন নিহত সবুজের পিতা জয়নাল আবেদীন।
নৃশংস এ হত্যাকান্ডের মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে জঘন্য এ হত্যাকান্ডে জড়িত মাস্টারমাইন্ডসহ দুজনকে গ্রেফতার করে হত্যা রহস্য উন্মোচনের সাফল্য অর্জন করায়, ঘাতকের আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের ঘটনায় প্রশংসায় ভাসছেন আলমডাঙ্গা -চুয়াডাঙ্গা পুলিশ প্রশাসন। ঘটনার পর থেকে পুলিশ সুপারের বলিষ্ঠ তত্বাবধান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান লালন ও আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন এজেন্সির তৎপরতা, এক সাথে অসাধারণ টিমওয়ার্ক ছিল চোখে পড়ার মত। সব মিলিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ প্রশাসন।