চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার ৩৭ জন বেকার উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যাওয়ার পথে দালালদের হাতে বন্দি মুক্তিপণ দিতে গিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলো পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানান, আলমডাঙ্গায় ইতালি নেয়ার পথে লিবিয়ায় দালালদের হাতে বন্দি হয়ে আছেন আলমডাঙ্গার ৩৭ জন যুবক। তাদের ওপর চালানো হচ্ছে মধ্যযুগীয় নির্যাতন। ভিডিও কলের মাধ্যমে সেই অমানবিক নির্যাতনের চিত্র দেখিয়ে পরিবারের কাছে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করছে চক্রটি। অভিযোগ উঠেছে, আলমডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামের জীবন আহম্মেদ ৩৭ জন নিরীহ যুবককে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে না পাঠিয়ে প্রতারণা করছে। এ চক্রের সাথে রয়েছে জীবনের ভাই লিবিয়া প্রবাসী বেলগাছি গ্রামের সাগর। নির্মম এ নির্যাতনের ভিডিও দেখে স্বজনরা হয়ে পড়েছেন উদ্বিগ্ন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামের জান্টু মেম্বরের ছেলে জীবন আহম্মেদ নিরীহ যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে বলেন- তার ভাই সাগরের মাধ্যমে ইতালি গেলে পাওয়া যাবে মোটা অংকের বেতনের চাকরি। বিনিময়ে প্রত্যেককে ১৩ লাখ টাকা দিতে হবে। এই টাকার বিনিময়ে তাদের দুবাই থেকে ইতালি পাঠানো হবে। তার প্রলোভনে পড়ে ওই গ্রামের ঠান্ডুর ছেলে জীম ও ঠান্ডুর স্ত্রী বেদানা খাতুন, বজলুর রহমানের ছেলে সবুজের মাধ্যমে হাউসপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে মামুনুর রশিদ, খেজুরতলা গ্রামের তামসের আলীর ছেলে মিঠুন, একই গ্রামের রেজাউল হকের ছেলে তুহিন হক, আব্দুল মজিদের ছেলে তিতাস, আজগর আলীর ছেলে জুয়েল রানা, সাজাহান আলীর ছেলে হাসিবুল ইসলাম, তমেজ আলীর ছেলে আরিফুল ইসলাম, হাসান মন্ডলের ছেলে বকুল হোসেন, শওকত আলীর ছেলে নয়ন হক, ফারুক হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ, জমসেদ আলীর জুনায়েদ হাসান প্লাবন, আল মামুনের ছেলে আবু জাফর, মহাবুল হোসেনের ছেলে সাগর আলী, মনির উদ্দিন মন্ডলেল ছেলে মিল্টন আলী, অহিদুল ইসলামের ছেলে মোশারফ আলী, নজরুল ইসলামের ছেলে বিপুল হোসেন, নাসির উদ্দিনের ছেলে নিশান মিয়া, আনিছ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ জাহিদ, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সজিব হোসেন, ফজলুর রহমানের ছেলে হৃদয় আহমেদ টিটন, জহুরুল নগরের লাল্টু রহমানের ছেলে সবুজ আলী, কাবিলনগর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে বিপ্লব হোসেন, ঘোলদাড়ি গ্রামের শ্রী চিত্তরঞ্জনের ছেলে শ্রী সনজিত কুমার, কেশবপুর গ্রামের মাহাবুল ইসলামের ছেলে মামুন আলী, চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার মোমিনপুর গ্রামের সমীর আলীর ছেলে তরিকুল ইসলামসহ ৩৭ জন বিদেশের উদ্দেশে পাড়ি জমায়।
বিভিন্ন তারিখে নগদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ লাখ টাকা করে পরিশোধ করে। টাকা পেয়ে জীবন গং ভুক্তভোগীদের দুবাই নিয়ে যায়। দুবাই থেকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা প্রতারণা করে দুবাই থেকে লিবিয়া নিয়ে যায়। লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে একটি গোপন কক্ষে আটকিয়ে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক নির্যাতন করে। লিবিয়ায় অমানবিক নির্যাতনের ভিডিও মোবাইলের মাধ্যেমে দেশে এসব যুবকদের স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। টাকা নেওয়ার পরও তারা ওইসব যুবকদের সেখানে আটকিয়ে রেখে জন প্রতি আরও ২২ লাখ টাকা দাবী করছে। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী যুবকদের স্বজনরা মোবাইলে এ দৃশ্য দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা না পারছেন টাকা পাঠাতে না পারছেন সেখান থেকে তাদের মুক্ত করতে। কোন উপায় না পেয়ে সঠিক পথ খুঁজে পেতে ও বিচারের আশায় যাদবপুর গ্রামের আব্দুস সুবহানের স্ত্রী ছাবিনা খাতুন, খেজুরতলা গ্রামের নাসির উদ্দিনের স্ত্রী সাবানা খাতুন ও জুয়েল আলীর স্ত্রী পলি খাতুন হাউসপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে মাসুদ রানা, খেজুর তলা গ্রামের ওহিদুল ইসলামের স্ত্রী কল্পনা খাতুন থানা পুলিশের নিকট অভিযোগ দিয়েছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতারকদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ৩৭ জনের পরিবারের সদস্যরা। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী জুয়েল রানার স্ত্রী পলি খাতুন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান লালন বলেন, আমরা ভুক্তভোগী পরিবারের নিকট থেকে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা দালালদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছি। একইসাথে এটা নিয়ে সিআইডির সাথে কথা হয়েছে। তারাও প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনসহ অপরাধী সনাক্ত ও আটকে কাজ করবে।