কলেজ ক্যাম্পাসে আড্ডায় আড্ডায় বান্ধবীরা হতাশা ব্যক্ত করে বলত, “ধুর পড়ে কি হবে চাকরিই যদি না হয়?”
লামইয়া শিল্পপতির মেয়ের মত ভঙ্গি করে বলত, “যা আমি তোদের চাকরি দিয়ে দেবো।”
লামইয়া কোন শিল্পপতির মেয়ে না, সে একজন ব্যাংকারের মেয়ে। ব্যাংকে রাখা পরের টাকা হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কিভাবে টাকায় টাকা আনতে হয় তা বাবার কাছ থেকে শিখে নিয়েছিল লামইয়া। ইচ্ছে ছিল বড় ব্যবসায়ী হবে সে, বড় একটা অফিস থাকবে তার কিন্তু স্বপ্ন অঙ্কুরে থাকতেই অনার্স পড়ুয়া অবস্থায় চুয়াডাঙ্গার জোয়ার্দ্দার বাড়িতে বিয়ে হয়ে যায় তার।
বিয়ের পর কিছুদিন যেতে না যেতেই লামইয়া খেয়াল করে তার অন্তরে সুপ্ত সেই ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন বিকোশিত হচ্ছে। সে তার ইচ্ছার কথা স্বামী-শ্বশুরকে জানায়। লামইয়া মোট ৫ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়ে।
প্রথমে সে মেয়েদের থ্রী-পিচে অসাধারণ হাতের কারুকাজ দিয়ে পোষাককে মনোহারি করে তুলতে থাকে। চোখে পড়লেই তা পছন্দ হতে থাকে যে কোন মেয়ের। চেনা-জানা মহল থেকে অর্ডার পেতে থাকে প্রচুর। সুলভমূল্যে বিক্রি হতে থাকে তার থ্রী-পিচ। কয়েক মাস এভাবে চলার পর লামইয়ার হাতে অনেক টাকা আসতে থাকে।
এরপর সে একের পর এক ব্যবসার পরিসর বাড়ায়। ব্যবসায় যোগ করে দৃষ্টিনন্দন বিছানার চাদর, সিলেট ও রাঙামাটির আদিবাসীদের অসাধারণ পোষাক এবং মনিপুরি শালের বিশাল সমাহার গড়ে তোলে বাড়িতে।
এছাড়াও গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে সরবারহ করছে গাওয়া ঘি, মেহেরপুরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি সাবিত্রী, রসকদম্ব, পাহাড়িদের শক্তিময় খাবার কাজু বাদাম ও কাঠ বাদাম। তার রয়েছে অনলাইনভিত্তিক পেইজ ‘সম্পূর্ণা’। অর্ডার দিতেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই গ্রাহকের দরজায় পৌঁছে দিচ্ছে চাহিদামত সকল পণ্য।
লামইয়া তার কলেজ বান্ধবীদের হয়ত চাকরি দিতে পারেনি কিন্তু তার ‘সম্পূর্ণা’কে ঘিরে বেশ কয়েকজন মানুষ নিরলস কাজ করছে। লামইয়া এখনও স্বপ্ন দেখে তার একটা কোম্পানী হবে, যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে ।
লামইয়া বলেন, শুরুটা ছোটই ছিল কিন্তু এখন স্বপ্নের সাথে সাথে ব্যবসাও অনেক বড় হয়েছে। আমার পণ্য এখন কুরিয়ারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। আরও অনেক নতুন পরিকল্পনা আছে সেগুলো ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন হবে ইনশাল্লাহ।