আলমডাঙ্গার ফরিদপুর গ্রামের বকুল অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া একটি মেয়ের ঘরে ঢুকে গ্রামবাসীর ঘেরাওয়ের শিকার হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রামবাসী বেঁধে গণপিটুনী দিয়ে বকুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
বকুল বেলগাছি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদপুর গ্রামের আশরাফুল হক মন্টুর ছেলে। বকুলের জীবনজুড়ে নানা কুকীর্তির অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে গ্রামবাসী।
জানা গেছে, ফরিদপুর গ্রামের কারিগরপাড়ার অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া একটি মেয়েকে টার্গেট করে ওই পরিবারের লোকজনের সাথে সম্প্রতি সখ্য গড়ে তোলে বকুল।
বকুল মাঝেমধ্যেই ওই বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকে। এরই মধ্যে বকুল মেয়েটির ওপর নজর রাখতে থাকে। সে কোথায় ঘুমায়, কখন ঘুমায় সবই বকুল নখদর্পনে নিয়ে নেয়। বুধবার রাতেও বকুল ওই বাড়িতে যায়। সে রাত ১১ টার আগে কোন এক ফাঁকে গোপনে মেয়েটির ঘরে ঢুকে চৌকির নিচে লুকিয়ে থাকে।
মেয়েটিও রাতের খাবার খেয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়লে রাত ১১ টার পর বকুল চৌকির নিচ থেকে বেরিয়ে মেয়েটির বিছানায় গিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়েটি আকস্মাৎ চোখ মেলে দেখতে পায় তাকে জাপটে ধরে আছে বকুল। সে বকুলের হাত থেকে বাঁচতে চিৎকার করতে থাকে।
মেয়েটির চিৎকার চেচামেচিতে তার পরিবারের লোকজন ঘুম থেকে উঠে পড়ে। পরিবারের লোকজন বারেবার ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ঘরের দরজা খুলতে অনুরোধ করতে থাকে। কিন্ত দরজা খুললে মেয়েটিকে গলা টিপে হত্যার হুমকি দেয় বকুল।
মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা জানায়, দরজা না খুললে বিকল্প হিসেবে তারা অন্য ঘরের আড়ার ওপর দিয়ে ওই ঘরে প্রবেশ করে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন।
এদিকে, বাড়িতে চিৎকার হওয়াতে প্রতিবেশীরাও ওই বাড়িতে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। এ সময় তারা বকুলকে বেঁধে উত্তমমধ্যম দিতে থাকে। গভীর রাতে বকুলকে ঘিরে নারী-পুরুষের জমায়েত হতে থাকে। পরে রাত সাড়ে ৩ টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গণরোষ থেকে বকুলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
প্রতিবেশীরা জানায়, এরকম মেয়ে ঘটিত অনেক ঘটনা বকুলের জীবনে রয়েছে। সে আনুমানিক ১০ বছর আগে স্কুলপাড়ার সেকেন্দার মোল্লার বড় মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। গোপনে তাকে বিয়েও করে। বিয়ে করে আলমডাঙ্গায় একটি ভাড়া বাড়িতে তাকে রেখে কিছুদিন সংসারও করে। এরই মধ্যে মেয়েটি টের পায় তার স্বামী বকুলের একাধিক মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এসব জানার পরই ওই সংসার ভেঙ্গে যায়।
এরপর বকুল ফরিদপুর কারিগরপাড়ার নুরুল ইসলামের মেয়ের সাথে একই রকম সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাকেও একই কায়দায় গোপনে বিয়ে করে। মেয়েটির কোলজুড়ে একটি কন্যা সন্তানেরও জন্ম হয়। কিন্ত ৫ বছরেও বকুলের পরিবার মেয়েটিকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি। সে তার পিতার বাড়িতেই থাকতে বাধ্য হয়। দরিদ্র নুরুল ইসলাম ক্ষমতার কাছে পরাজিত হন। তিনি মেয়ের স্ত্রীর মর্যাদাও এ পর্যন্ত আদায় করতে পারেননি।
এদিকে, পুলিশের হাতে আটক হওয়া বকুল ফরিদপুর কারিগরপাড়া পুরাতন জামে মসজিদের সেক্রেটারী বলে জানা গেছে। রাতের জঘন্য ঘটনার পর তাকে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী পদ থেকে অপসারণেরও দাবি তুলেছে গ্রামবাসী।