আলমডাঙ্গার বাড়াদি ইউনিয়ন (ইউপি) নির্বাচনকে ঘিরে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। দীর্ঘ ১০ বছর পৃথক বিএনপি প্রার্থী চেয়ারম্যান হিসাবে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করলেও এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব নিয়ে চলছে সমালোচনা। আর মাত্র ১৪ দিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।
এবারের নির্বাচনে কি আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয় আনতে পারবে ? এমনই সমালোচনা চলছে বাড়াদি ইউনিয়ন জুড়ে। তবে বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করলেও তাদের সমর্থনকারী নেতাকর্মীরা নৌকাকে হারাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।
ইউনিয়ন সূত্রে জানাগেছে, আসন্ন বাড়াদি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয়েছে নির্বাচনির আমেজ। গত শুক্রবার প্রতিক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। এবারের নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে সরাসরি প্রার্থীরা অংশ গ্রহন না করায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নৌকা পেয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাবুল হক সম্রাট।
গত ২০১১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নৌকার প্রতিক পায় মরহুম আবু সামা জোয়াদ্দার। সে সময়ের বিএনপির প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান তবারক হোসেন ভোট যুদ্ধে নির্বাচিত হয়। এছাড়াও গত ২০১৬ সালের ইউনিয়ন নির্বাচনের ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী মরহুম আব্দুর রাজ্জাক নৌকা প্রতিক পায়। আলমডাঙ্গার ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে জেহালা ও বাড়াদি ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপির প্রার্থী মাসুদ পারভেজ বিজয় লাভ করে। তৎকালীন সময়ে ১১ টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নৌকা বিজয় লাভ করলেও এ দুটি ইউনিয়নকে কেন্দ্র করে সমালোচনা শুরু হয়।
তবে, বাড়াদি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দ্বীপাক্ষিক অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে পর্যায় ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে হার মানতে হয় আওয়ামী লীগকে। এবারের নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণের নেতা শুণ্য কোটায় থাকলেও দলের ক্ষেত্রে ও নৌকাকে বিজয় লাভ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে অনুরোধ জানায় চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাবুল হক সম্রাট।
২০২১ সালের তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২৮ শে নভেম্বর। এবারের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে বিএনপির সাবেক দুই চেয়ারম্যান তবারক হোসেন ও মাসুদ পারভেজ। এছাড়া নবাগত বিএনপি নেতা উজ্জল হোসেন। এবারও নৌকাকে হারাতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের মাঠে আছে সেতু।
ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বিএনপির সাবেক দুই চেয়ারম্যানকে পিছু ফেলে পোলতাডাঙ্গা গ্রামের ছেলে বিএনপি নেতা উজ্জল এগিয়ে আছে। আওয়ামী লীগের দলের মধ্যে সতন্ত্র হওয়ায় আবারো হার মানতে হতে পারে নৌকার প্রার্থীকে। নির্বাচনের আর মাত্র ১৪ দিন বাকি থাকলেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠ পর্যায়ে নৌকার পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়নি। কিন্তু বিএনপির সতন্ত্র প্রার্থীরা প্রকাশ্যে নির্বাচনের মাঠে ভোট চাইতে দেখা না গেলেও রাতের আধারে চলছে গণসংযোগ।
নাম না প্রকাশ শর্তে বিএনপির সতন্ত্র প্রার্থী জানান, বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করায় তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধীক মামলা হয়েছে। গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে ইউপি নির্বাচন বর্জন করা হয়েছে। ইউনিয়নের জনগণের সমর্থকদের কারণে আবারো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা হয়েছে।
আরেক বিএনপি প্রার্থী জানান, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জয় তাদের নিশ্চিত। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিএনপির জন্য সুখবর বয়ে আনবে বলে আশা তাদের।
এদিকে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আসাবুল হক সম্রাট জানান, দীর্ঘদিন বাড়াদি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ দলটি কোন ঠাসা। ইতো মধ্যে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। নির্বাচনে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সেভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করা হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, ইতো মধ্যে পরপর দুইবার বাড়াদি ইউনিয়ন বিএনপির প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে কিংবা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ কোন ভাবে মাথা চাড়া দেয়নি নির্বাচনকে ঘিরে। তবে আশাবাদী এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা বিজয় লাভ করবে।