আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান চঞ্চলের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে ইউপি সদস্যরা।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তারা চেয়ারম্যানের অব্যাহতি চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অনাস্থা দিয়েছে পরিষদের ১২ জন সদস্য।
মাহমুদুল হাসান চঞ্চল উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ২০২১ সালের ২৮শে নভেম্বর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র (আনারস) প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেন ইউপি সদস্য হারুন মন্ডল, শাহাদত হোসেন, রবিউল ইসলাম, মেহেরাজ আলী, ঠান্ডু আলী, শামিম রেজা, সেন্টুু মালিতা, লাল্টু আলী, শ্রীমতি লিনা বিশ্বাস, তাপসী নেছা, মজিরন খাতুন ও রাহান উদ্দীন।
লিখিত ওই প্রস্তাবে ইউপি সদস্যরা উল্লেখ করেছেন, বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান চঞ্চল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩২ মাসের বেতন না দিয়ে রেজিস্ট্রি খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের করে দেন। পরিষদের উন্নয়ন মূলক কাজের আয়-ব্যায়ের হিসাব মাসিক সভায় পেশি শক্তির ভয় দেখিয়ে ইউপি সদস্যদের সাক্ষর করে নেয়। এছাড়া তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে গৃহীত প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করে নেন। হতদরিদ্র কর্মসূচি প্রকল্পের ৬৪ জন শ্রমিকের মোবাইলের সিম কার্ড তার হেফাজতে রেখে দেয়। ওই প্রকল্পের শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা না দিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই তুলে আত্নসাৎ করেন। ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কারের ১২ লাখ টাকা চেয়ারম্যান নিজেই (পিআইসি) হয়ে নামমাত্র কাজ করে বিল তুলে নেয়।
তারা অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, গত তিন বছরে ইউনিয়ন পরিষদে প্রায় ২৪/২৫ লাখ টাকা ট্যাক্স আদায় হয়েছে। পরিষদের (সচিব) লিমন শেখ কাছে জানতে চাইলে তিনি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে নির্দেশ দেন। এবিষয়ে চেয়ারম্যান চঞ্চলের কাছে জানতে গেলে ইউপি সদস্যদের উপর চড়াও হয়ে মারপিট করে। এছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরে গভীর নলকূপ সাবমার্সেবল টিউবওয়েল নির্মাণের জন্য সচিবের নিকট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ওই টাকা ইউপি চেয়ারম্যান আত্নসাৎ করেছে। পরিষদে সাপ্তাহিক গ্রাম্য সালিশে বাদি-বিবাদী যে জরিমানা করা হয়, চেয়ারম্যান ওই টাকাও আত্নসাৎ করে নেয়। তাঁর এমন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কারণে অনাস্থা করেছি এবং তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হারুন মন্ডল বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভীষণ কষ্টে দিন পার করতেছি। মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা পাই। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার পাই রাজস্ব খাত থেকে বাকি সাড়ে পাঁচ হাজার পাই পরিষদের আয় থেকে। প্রায় তিন বছর ধরে পরিষদের অংশের কোনো ভাতা পাই না।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান চঞ্চল মুঠোফোনে বলেন, ‘সব সময় তাঁরা (ইউপি সদস্যরা) অসহযোগিতা করে যাচ্ছেন। যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যদের অবহিত করা হয়। ডাকলেও তাঁরা আসেননি।’ সদস্যদের ভাতা না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পরিষদের আয়ের ওপরেই ভাতা পাওয়া নাপাওয়া নির্ভর করে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস বলেন, এখনো আমি কাগজ হাতে পায়নি। তবে একজন সিনিয়র অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে। সরকারি বিধি মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।