আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় দোকান কর্মচারী মোস্তফা আলী (২৪) চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় হত্যা মামলার মূল আসামি আকরাম হোসেনকে (২৪) গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার আসামি আকরাম হোসেন আলমডাঙ্গা মোড়ভাঙ্গা গ্রামের আকুব্বার আলীর ছেলে। দোকানের টাকা চুরি করায়, নিহত মোস্তফা সেটা দেখে ফেলায় তাকে হত্যা করা হয় বলে আসামী আকরাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মা শাহিদা খাতুন আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নারায়নগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানাধীন ১৩ নম্বর সেক্টর পূর্বাচল এলাকা হতে মূল আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হাটবোয়ালিয়া দোকান মালিক জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মামলার আসামি গোলাম মোস্তফা সজিবের সঙ্গে গ্রেফতার আসামি আকরাম হোসেনের দোকানের মালামাল কেনাকাটা সূত্রে পূর্বপরিচিত।
আকরাম বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হওয়ার কথা সজিবকে জানায়। সজিব আকরামকে বলে যে, তার একটি কাজ করে দিলে সে মোটা অংকের টাকা দেবে যা দিয়ে এনজিও লোনের টাকা পরিশোধ করতে পারবে। দোকানের ক্যাশের ড্রয়ার থেকে টাকা-পয়সা নেওয়ার সময় মোস্তফা দেখে ফেলে এবং আসামি সজিবের ভাই দোকান মালিক জাহাঙ্গীরকে বলে দেয়। এই নিয়ে দোকান মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ছোট ভাই আসামি সজিবের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। আসামি সজিব ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানের কর্মচারী মোস্তফাকে দোকানে না আসার জন্য হুমকি দেয়। মোস্তফা ভয়ে কিছুদিন দোকানে আসে না।
ঘটনার দিন দোকান মালিক জাহাঙ্গীর মোস্তফার বাড়িতে যেয়ে অনুরোধ করে দোকানে নিয়ে আসে। মোস্তফা দোকানের কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে হাটবোয়ালিয়া মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর অবস্থিত স্টিল ব্রিজ পার হয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ওৎ পেতে থাকা সজিব ও আকরাম পেছন থেকে ভুক্তভোগী মোস্তফাকে ডাক দেয়। তাদের ডাকে মোস্তফা ফিরে আসলে আসামি আকরাম কৌশলে ভুক্তভোগীকে ব্রিজের পাশে পানের বরজের মধ্যে নিয়ে সজিব ও আকরাম চড়-থাপ্পড় মারলে মোস্তফা চিৎকার করতে গেলে মুখে গামছা চেপে ধরে। এতে মোস্তফা নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
তখন আকরাম ও সজিব মোস্তফার হাত পা বেঁধে নাক-মুখে গামছা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে সজিব ও আকরাম মোস্তফাকে মাথাভাঙ্গা নদীতে থাকা মাছ ধরা বাঁশের খুঁটির সঙ্গে পানির নিচে মোস্তফার কোমরের বেল্টের সঙ্গে গামছা দিয়ে বেঁধে রাখে। সজিব ঘটনার পরের দিন আকরামকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকায় চলে যেতে বলে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ আগস্ট আলমডাঙ্গা হাটবোয়ালিয়া বাজারের জাহাঙ্গীরের দোকানের কর্মচারী মোস্তফা আলী দোকানের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে খুন হন। এর ১০ দিন পর ২৪ আগস্ট মহেষপুর-বাঁশবাড়ীয়া ফেরিঘাট এলাকায় মাথাভাঙ্গা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় অর্ধ গলিত মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। নিহতের মা শাহিদা খাতুন আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।