আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য দিন দিনই বেড়েই চলেছে। তাদের দৌরাত্ম্যে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
চিকিৎসকের কক্ষের দরজা ও বহিঃ বিভাগের সামনে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছেনা কেউ? রোগীরা বের হলেই জোরপূর্বক ব্যবস্থাপত্র নিয়ে করা হচ্ছে টানাহেচড়া এতে রোগীরা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, প্রেসক্রিপশন ঔষুধ লিখার জন্য প্রতিমাসেই কলম, পেড, চাবির রিং থেকে শুরু করে টিভি-ফ্রিজসহ মোটা অংকের উপহার দিয়ে দিতে হয় ডাক্তারদের। তার বিনিময়ে প্রতিটি প্রেসক্রিপশনেই আমাদের ঔষধ লিখতে হবে। এছাড়াও এসব ব্যবস্থাপত্রের একটি কপি মেইল করে হেড অফিসেও পাঠাতে হচ্ছে।
নাসিমা আক্তার সুরভী নামের এক রোগী বলেন, তীব্র গরমে আমি বেশি অসুস্থ্য হওয়ার পর বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় তলায় মেডিকেল অফিসার কক্ষে আসি। সেখানে দেখি ওই চিকিৎসকের সঙ্গে কেউ বসে কেউ দাড়িয়ে খোশগল্পে মেতে রয়েছেন বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। ডাক্তার কোন কোম্পানির ঔষুধ রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লিখবেন তা নিয়েও শুরু হয় তাদের মধ্যে তর্কবির্তক। দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর বাধ্য হয়ে কক্ষে ঢুকে চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেই।
সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালের বহিঃ বিভাগের সামনে এবং ভিতরের বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ঔষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের ভিড় লেগেই আছে। নির্দিষ্ট সময়ের বাহিরে তারা ভিজিট করে রোগীদের চিকিৎসা সেবায় বেঘাত ঘটাচ্ছেন। দেখা গেছে, যখন রোগী টিকেট কেটে চিকিৎসা সেবার জন্য চিকিৎসকের কক্ষে যান তখন একাধিক প্রতিনিধি ওই কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ভিড় জমিয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ রোগীকে অপেক্ষায় রেখে তাদের ভিজিট সেরে নিচ্ছেন। এর বাহিরে প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে এসব প্রতিনিধিদের নানান দৃশ্য।
সরকারি এ হাসপাতালটিতে যখন বিভিন্ন রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে টিকেট নিয়ে ফিরে যান তখন দেখা যায়, বিভিন্ন কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ওইসব রোগীদের পথে দাঁড় করিয়ে তাদের হাতের টিকেট টেনে নিয়ে ওই টিকেটের ছবি তুলে রাখেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসার চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। প্রায়ই দেখা গেছে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ওই জরুরী বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাদের কারণে রোগীরা সে ভিড়ে ঠেলে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। আবার ভেতরে প্রবেশ করলেও দেখাযায় সেখানে চলছে ভিজিট। এভাবেই প্রতিদিন সরকারি এ হাসপাতালটিতে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলছে। আর প্রতিনিয়ত দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শারমিন আক্তার বলেন, ঔষধ কোম্পানি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে তাদেরকে ভিজিট করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। তাঁরা সকাল থেকেই হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন। শনি ও মঙ্গলবার দুপুর ১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত ভিজিটের অনুমতি দেওয়া হয়। তবুও তাঁরা জোরপূর্বক হাসপাতালে ভিজিট করেন। গতকাল বুধবার নোটিশ বোর্ডে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিজিটের জন্য রবি ও বুধবার সকাল ৮ থেকে ৯ টা পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে রোগীদের নিকট থেকে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ছবি তুলে থাকেন এমন অভিযোগ পেয়েছি। যদি তাঁরা সময় মত ভিজিট না করে, রোগীদের হয়রানী দেয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।