দেশে বিভিন্ন আইন, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও আলমডাঙ্গায় ইটভাটার দৌরাত্ম্য কমছে না। মালিকরা মানছেন না কোনো নিয়মকানুন; ক্রমেই বন উজাড়, কৃষির ক্ষতি ও দেশের ভূ-প্রকৃতি ধ্বংস করে মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট।
এতে ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, কমছে চাষাবাদের জমি ও গাছ। বর্তমানে খনিজ কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আলমডাঙ্গায় অধিকাংশ ভাটায় পুড়ছে বনজ গাছ। আইনশৃঙ্খলার মাসিক মিটিংয়ে ইট ভাটা গুলো তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিবে এমন আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহি অফিসার রনি আলম নূর।
জানাগেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ইট ভাটা রয়েছে ২০ টি। এসব ভাটায় নেই সঠিক কাগজপত্র। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না থাকলেও পোড়ানো হচ্ছে বনজ গাছ। ইটের ভাটায় আগুনের মৌসুম হিসাবে গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত খড়ি পোড়ানোর অনুমোদন দেয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গাছ পোড়ানোর অনুমোদন পেতে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে বলে ভাটা মালিকেরা দাবি করেন। কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৫ তারিখ উপেক্ষা করে এসব ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে গাছ। ভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের যেমন ক্ষতি করছে তেমনি উজাড় হচ্ছে হাজার হাজার ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ।
এছাড়াও ভাটা গুলো বিভিন্ন মাঠের আবাদি জমির টপ – সয়েল কাটায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। জমি মালিকদের উচ্চ মূল্য দিয়ে আবাদি জমিতে পুকুর খনন করছে। এসব মাটি পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে অনুমোদনহীন অবৈধ যানবহন। এ গাড়ি গুলো দ্রুত গতিতে যাতায়াত করায় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় পথচারীদের। পরিবহন করা মাটি -কাঁদা রাস্তায় পড়ার কারণে যাতায়াতে অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
গতকাল সোমবার আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা দাবি করে বলেন, আলমডাঙ্গার ইট ভাটা গুলোতে কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে খড়ি। প্রশাসনকে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। এতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা ক্ষোভপ্রকাশ করেন।
এরই ধারাবাহিতায় আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন ইটের ভাটা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ফরিদপুর গ্রামের জাবরের ইট ভাটার সামনে জড়ো করা হয়েছে বনজ গাছ। যা এ মৌসুমের শুরু থেকে ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানান।
এদিকে, বন্ডবিল এলাকার মতিয়ার রহমান বাবুর ইট ভাটায় দীর্ঘদিন যাবৎ খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হলেও উপজেলা প্রশাসন কোন ভূমিকা পালন না করা তিব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়লায় পোড়ানো ইট ভাটা মালিকেরা।
এছাড়াও, কুমারি গ্রামের সরকারি ভ্যাটেনারি কলেজের অদূরে দীর্ঘদিন যাবৎ বনজ খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। প্রতি বছর খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হলেও উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর কোন পদক্ষেপ নেয় না বলে এলাকাবাসীরা জানায়।
উপজেলার বিশিষ্টজনেরা দাবি করেন, ভাটা মালিকদের অত্যাচারে রাস্তায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এছাড়াও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না থাকলেও প্রকাশ্যে গাছ পোড়ানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে সাধারণ মানুষ। ইট ভাটার গাড়ির ধাক্কায় অনেক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটলেও ক্ষমতার জোর দেখিয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
ইট ভাটায় খড়ি পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট রনি আলম নূর বলেন , আমরা দ্রুত অভিযান পরিচালনা করবো । তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রশাসন অনেক কাজ করেন। যদি কেউ সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে গাছ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান।