আলমডাঙ্গা উপজেলাজুড়ে ঘরে ঘরে গরু চাষিদের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে। ঘুম হারাম হয়ে গেছে গরু খামারিদেরও। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বছর ব্যাপী গরু লালন-পালন করে মহামারি করোনার ফেরে পড়ে গেছে তারা। আসন্ন ঈদ ও গরু কেনাবেচায় গভীর অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় শত শত গরু চাষিদের মাঝে এই হাহাকার দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গরু লালন-পালন করেন কৃষকেরা। কৃষক-কিষানি মিলে বাড়িতে বাড়িতে দুই-তিনটা করে গরু বড় করে তোলেন। বছর ধরে ধারদেনা করে গরুর খাবার কেনেন তারা। অনেকে বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা ঋন নিয়েও গরু কেনেন। ঈদে সেই গরু বিক্রি করে ঋন পরিশোধ করেন। কিন্ত এবছর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে পুরো বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও। একই সাথে স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছে আলমডাঙ্গার হাজারো কৃষকের পুরো পরিবারের।
আলমডাঙ্গার কুমারি গ্রামের গরুর খামারী রানা মন্ডল জানান, তার খামারে শতাধিক গরু রয়েছে। ভরবছর গরু বেচাকেনা হলেও করোনার কারনে সবকিছু বন্ধ রয়েছে। গরুর হাটও বন্ধ রয়েছে। ব্যাপারিরা কেউ আসছেন না। কেউ কেউ আসলেও গরুর দাম বলছেন অর্ধেক।
তিনি জানান, এ রকম চলতে থাকলে রাস্তায় বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
নাগদাহ ইউনিয়নের জাঁহাপুর গ্রামের খামারি রাসেল জানান, তার খামারিও বড়। ঈদকে সামনে রেখে বিক্রির জন্য প্রস্তত অর্ধশতাধিক গরু। কিন্ত গরুর হাট বন্ধ থাকায় বেচাকেনাও বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য বছর গরুর ব্যাপারীরা এসে গরু পছন্দ করে দরদাম করে যান। এ বছর সে রকম কেউ আসছেন না। গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বলে জানান তিনি।
চরপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক ডাবলু জানান, তিনি স্বামী-স্ত্রী মিলে বাড়িতে তিনটা গরু লালন-পালন করে বড় করেছেন। তিনি দু‘টি এনজিও থেকে ঋন নিয়ে আর বাড়ির টাকা মিলে তিনটা গরু কেনেন। গরুর খাবার বাকিতে কেনেন আলমডাঙ্গা শহরের একটি আড়ত থেকে।
তিনি জানান, গরু সঠিক সময়ে বিক্রি করতে না পারলে পরিবারসহ বেকায়দায় পড়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরু নিয়ে এরকম অনিশ্চয়তার গল্প উপজেলার প্রতিটি গ্রামের প্রায় বাড়িতে বাড়িতে।
গ্রামের গরু চাষিরা গভীর আশংকা নিয়ে বলেন, করোনার কারনে ঈদুল ফিতরের নামাজ ঈদগাহ মাঠে হয়নি। প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। এ অবস্থায় আসন্ন কোরবানির ঈদেও করোনার প্রভাব পড়লে গরু কেনাবেচা নিশ্চিভাবেই কমে যাবে।
এতে করে মারাত্মক ক্ষতির সন্মুখিন হবেন প্রান্তিক গরু চাষিরা। আবার বিপুল সংখ্যক এই গরু চাষিদের জন্য সরকারের কোন প্রণোদনা প্যাকেজও নেই।