বিয়ের পর ইডেন কলেজ থেকে বোটানিতে মাস্টার্স করেন কেয়া। এরই মধ্যে কেয়ার কোলজুড়ে লিনাত নামের একটি কন্যা সন্তানেরও জন্ম হয়। স্বামী বেকার কেয়াও বেকার। সচ্ছল পরিবারে বেকারত্ব পেট ভরাতে কষ্ট দেয় না। কিন্ত কেয়া লক্ষ্য করলো তার মনোজগতে একটা ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। ভেতরটা বিদ্রোহ করতে চাইছে। পরিবারে আলো ছড়াতে চাইছে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত নারীরা পরিবারকে আলোকিত করতে চায়।
এর মধ্যে কেয়া একটি অসাধারণ খবর পেল। ঢাকার একটি কলেজে প্রভাষকের চাকরী হয়েছে তার। কিন্ত এতে বাঁধ সাধলো শ্বাশুড়ীর সাথে কেয়ার প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। শ্বাশুড়ীকে ছেড়ে ঢাকায় সেটেল্ড হওয়া কঠিন মনে হল কেয়ার কাছে। কেয়া সিদ্ধান্ত নিল বাড়িতে থেকেই তিনি কিছু একটা করবেন।
ঠিক এসমই ছোট্ট মেয়ে লিনাতকে নিয়ে একটা ঘটনা ঘটে গেল। যে ঘটনা কেয়ার জীবনের দিক ঘুরিয়ে দিল। দোকান থেকে মেয়ের জন্য কিনে আনা সেরেলাক খেয়ে লিনাত অসুস্থ হয়ে পড়ল। কেয়া সেরেলাকের কৌটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে উৎপাদনের তারিখ দেখেন। কি কি উপাদানে সেরেলাক তৈরী তাও দেখেন। ঠিক তখনই তার মাথায় এক অসাধারণ আইডিয়া এলো। তিনি নিজের হাতেই সেরেলাক বানাবেন। নিজের হাতের তৈরী সেরেলাক বাচ্চাকে খাওয়াবেন।
পরদিন বাজার থেকে সেরেলাক তৈরির যাবতীয় উপাদান কিনে বাসায় ফিরলেন কেয়া। তৈরি হল হোম মেইড সেরেলাক। কেয়ার ভেতর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। তিনি তার হাতে তৈরি সেরেলাক দিনের বেশ কয়েকবার লিনাতকে খাওয়াতে লাগলেন। লিনাত আগ্রহ নিয়ে সেরেলাক খায়। এরপর কেয়া উৎসাহ নিয়ে আইটেম বাড়িয়ে হরলিক্সও তৈরি করে ফেললেন। নির্ভেজাল সেরেলাক ও হরলিক্স খেয়ে মেয়ে লিনাত খুব মজা পায়। খাওয়াতে লিনাতের মজা দেখে কেয়ার চোখে আনন্দে পানি চলে আসে।
কেয়া আনন্দাশ্রুকে মনের শক্তিতে পরিণত করতে চাইলেন। তিনি তার স্বামীর কাছ থেকে কুড়ি হাজার টাকা নিয়ে সেরেলাক আর হরলিক্সের উপাদান কিনে আনলেন। বাড়িতে তৈরি করতে লাগলেন সেরেলাক ও হরলিক্স। এরপর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব- যাদের বেবী আছে তাদের মাঝে বিতরণ শুরু করলেন সেরেলাক আর হরলিক্স।
কিছুদিনের মধ্যেই কেয়ার হোমমেইড প্যাকেটজাত বেবীফুডের প্রচার তার নিজের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরেও ছড়িয়ে পড়লো। তিনি একের পর এক অর্ডার পেয়ে কুরিয়ারে মাল পাঠাতে শুরু করলেন।
কেয়ার গল্পটা এখানেও শেষ হতে পারত। কিন্ত যারা নিজেরা সাফল্যের গল্পের জন্ম দেয় তাদের গল্প সহজে শেষ হতে চায় না।
উদ্যোমী কেয়া তার বাণিজ্যে আরও একটি সাফল্যের পালক যোগ করলেন। তিনি মেয়েদের এক রংয়া থ্রীপিছ কিনে হাতের অসাধারণ কারুকাজে আকর্ষণীয় করে তুলতে লাগলেন। একই কাজ করতে লাগলেন ছেলেদের পাঞ্জাবীতেও। এখন এসবও পাঠিয়ে দিচ্ছেন কুরিয়ারে ক্রেতাদের কাছে।
কেয়ার কুড়ি হাজার টাকার ব্যবসা এখন দুই লাখের পুঁজিতে গিয়ে ঠেকেছে। কেয়ার কোলজুড়ে আরও একটি সন্তানের জন্ম হয়েছে। কঠিন ব্যস্ততা তাকে পেছনে না ঠেলে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিকে তুলে দিয়েছে।
কেয়া জানান, নারীদের কর্মমুখী হওয়া প্রয়োজন। যে যেভাবে পারুক কিছু একটা করুক। চেষ্টা করলে সাফল্য আসবেই।
কেয়া বললেন, তার স্বামী- লিমন মল্লিক, আলমডাঙ্গার পশুহাট সড়কে তাদের বাড়ি। তিনি জানান, প্রয়োজনে মোবাইলের এই নম্বরে ০১৭১৬-৭৮-৭৮৭ যোগাযোগ করা যেতে পারে।