পৌনে চার বছরের শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিকে দিনের বেলায় গাছের সাথে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। ১২ আগস্ট বাড়ি ভর্তি প্রতিবেশীদের সামনে দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রতিবন্ধী আব্বাস উদ্দিনকে বেধড়ক পেটানো হয়। এরপর প্রতিবন্ধীর স্ত্রী ও ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সামনেই গাছের সাথে বেঁধে তাকে আবারও পেটানো হয়। সবশেষে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় আব্বাস উদ্দিনকে। ঘটনাটি ঘটে আলমডাঙ্গার ডাউকি ইউনিয়নের ছত্রপাড়া গ্রামে।
হঠাৎ করেই সপ্তাহবাদে গতকাল প্রতিবন্ধী আব্বাস উদ্দিনকে পৈশাচিক সেই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। নজরে আসে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনেরও। তড়িঘড়ি করে মারপিঠ করা দুইজনকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ বৃহস্পতিবারে তাদের বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
প্রতিবেশী সূত্রে জানা গেছে, ছত্রপাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে জামাল উদ্দিনের পৌনে চার বছরের মেয়ের পরনের প্যান্টে রক্তের দাঁগ দেখা যায় গত ১২ আগস্ট বিকেলের দিকে। মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করতে থাকে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তারা সন্দেহ করে প্রতিবেশী বুদ্ধি প্রতিবন্ধি আব্বাস আলীকে।
এরপরই আব্বাস আলীকে বাড়ি থেকে টেনেহিচড়ে বের করে আনা হয়। মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটানো হয়। পিটানোতে অংশ নেয় হাফিজুর রহমানের ছেলে জামাল, মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন ও মৃত মস্তক আলীর ছেলে মোমিন।
বেদম মারপিঠ ও আব্বাস আলীর মাগো মাগো চিৎকারে পাড়ার নারী-পুরুষ ও শিশুরা ঘটনাস্থলে এসে ভীড় করতে থাকে। সাপ খেলা দেখার মত গোল হয়ে দাঁড়িয়ে সবাই প্রতিবন্ধী আব্বাস আলীকে মারপিঠ দেখতে থাকে। এই পৈশাচিক দৃশ্যপটে প্রতিবন্ধী আব্বাস আলীর স্ত্রী ও ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও ছিল। কিন্ত তারা কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি। ক্ষমতার কাছে তারা ছিল পুরো অসহায়। প্রিয়জনের অমানুষিক নির্যতনের দৃশ্য দেখে ডুকরে কাঁদা ছাড়া তাদের কিছু করার ছিল না।
ভিডিওতে দেখা যায়, উঠোনের মত দেখতে একটি জায়গার চারদিকে নারী-পুরুষ ও শিশুরা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝখানের জায়গাটিতে জামাল, নাসির ও মোমিন বেধড়ক পেটাচ্ছে আব্বাস আলীকে। কখনও লাঠি দিয়ে আবার কখনও লাথি মেরে মারা হচ্ছে আব্বাস আলীকে। আব্বাস আলী অসহায়ের মত মাগো মাগো বলে চিৎকার করছে। কেউ এই মার থেকে আব্বাস আলীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছে না। বেশ কিছুক্ষণ ধরে মারপিঠ করার পর আব্বাস আলীর দুটো হাত পেছনের দিকে নিয়ে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। এরপর একটি গাছের সাথে বাঁধা হচ্ছে। গাছের সাথে বেঁধেও কিল-ঘুষি মারা হচ্ছে।
এ সময় নাসির ও মোমিন আব্বাস আলীকে মারতে থাকে। পাশে একটু দূরে দাঁড়িয়ে জামাল মোবাইলে কারো সাথে কথা বলতে থাকে। এরপরই পুলিশ গিয়ে আব্বাস আলীকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। তার নামে মামলাও হয়। সেই মামলায় প্রতিবন্ধী আব্বাস আলী এখনও জেলে রয়েছে।
তবে কয়েকজন প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ধর্ষণের ঘটনাটা ঠিক নয়। মিথ্যাভাবে এটা সাজানো হয়েছে। কেন সাজানো হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আব্বাস বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তবে তার স্ত্রীর বুদ্ধি অনেক ভাল। আব্বাস বেশীরভাগ সময় স্ত্রীর সাথে সাথেই লেগে থাকে। প্রতিবেশী অনেকের কুমতলব থাকতে পারে। সেটা হাসিল করতে না পেরে আব্বাস আলীকে হয়ত মারপিঠের অজুহাত খোঁজা হচ্ছিল।
এদিকে, নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় অভিযুক্ত জামাল ও নাসিরকে আটক করেছে পুলিশ। তাদেরকে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হবে।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই কামরুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের অভিযোগে আব্বাস আলী জেলে রয়েছেন। আবার গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় আরও আলাদা একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় জামাল ও নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন দুটি মামলাই চলবে।