এক সপ্তাহ ধরে ঠান্ডা জ্বরে ভুগছিল দেড় বছর বয়সী আফিয়া সুমাইয়া তাবাচ্ছুম। বাড়িতেই টুকটাক চিকিৎসা চলছিল তার। হঠাৎ অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, নিউমোনিয়া হয়েছে। তবে শয্যা না থাকায় হাসপাতালে রাখেননি। বিকেলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে।
একই দিন পার্শ্ববর্তী উপজেলার মিরপুর থানার বাসিন্দা আরজিনা বেগম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত দুই মাসের ছেলেকে নিয়ে আসেন হাসপাতালে। শয্যা না থাকায় বেলা সাড়ে ১১টা পেরিয়ে গেলেও ভর্তি করাতে পারেননি। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফিরবেন, নাকি জেলার হাসপাতালে যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় তীব্র গরমে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছে রোগী ও স্বজনরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের সামনেও ভিড়। সব ওয়ার্ডই রোগীতে পূর্ণ। এরই মধ্যে ৩১ শয্যার হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছে ৭০ জন রোগী। প্রতিদিনই হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ জন। এতে বেড়েই চলছে রোগীর চাপ। দ্বিগুণ রোগী হওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। মেঝে-বারান্দায় চাদর ও পাটি বিছিয়ে বসে ও শুয়ে আছে রোগী ও স্বজনরা। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা তাদের। বিছানার পাশ দিয়ে মানুষজন হেঁটে যাচ্ছে। পায়ের ধুলাবালু উড়ে বিছানায় ও নাকেমুখে যাচ্ছে। এ অবস্থায় রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
১৯৬২ সালে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পর ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী জনবল বাড়ানো হয়নি। এতে এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগসহ প্রতিদিন রোগী দেখা হয়েছে অন্তত ৮০০ জন। এর মধ্যে বহির্বিভাগে এসেছে ৬০০ এবং জরুরি বিভাগে ২০০ জন। গত জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ের শুরু থেকে হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ৪০০ রোগী সেবা নিয়েছে। দৈনিক গড়ে ১৫-২০ জন ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ৩১ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি আছে ৭৮ জন। তাদের মধ্যে শিশু-বৃদ্ধসহ ১৫ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। ২৪ ঘণ্টায় বহির্বিভাগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১০ জন ও ডায়রিয়ার ২৯ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এ ছাড়া জ্বর, ঠান্ডা ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীও আছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা (আরএমও) নাজমিন সুলতানা কণা জানান, তাপদাহের পর বৃষ্টি হওয়ায় রোগীর চাপ বেড়েছে। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় অনেক রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট থাকায় প্রত্যেকে ডাবল শিফটে সেবা দিচ্ছেন।