আলমডাঙ্গায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান-কর্মসূচি (কর্মসৃজন) প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা লুট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখিত প্রকল্পে কাজ না করে ভুয়া শ্রমিকের নামের তালিকা বানিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই অনিয়মের সঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত দেখভাল কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, কর্মসৃজন প্রকল্পের লুটের টাকা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, ট্যাগ অফিসার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও প্রকল্প দেখভালকারী কর্মকর্তার মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করা হচ্ছে।
প্রতিটি ইউনিয়নে ৮/১২ হাজার টাকা সাপ্তাহিক অর্থ হাতিয়ে নিছে বলে অভিযোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পের ৪০ দিনের জন্য মোট ১ কোটি ৭৩ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। সেই বরাদ্দ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে পাঁচটি করে প্রকল্প ভাগ করে দেওয়া হয়। প্রকল্পের জন্য উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নে ২ হাজার ১শত ৬৪ জন শ্রমিক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার প্রতিটি প্রকল্পেই কাজ করছে অর্ধেকেরও কম শ্রমিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, পিআইসিরা তাদের কাছ থেকে আগেই সব স্বাক্ষর করে নিয়েছেন। তাছাড়া অনেকের নাম আছে যাদের কোনোদিন প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে কয়েকজন পিআইসি ও ইউপি সদস্য বলেন, বর্তমানে একজন শ্রমিকের মজুরি ৪০০ টাকা। সেখানে মাত্র ২০০ টাকায় কোনও শ্রমিক কাজ করতে আসতে চান না।
এ ধরনের অনৈতিক বা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কাজ করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, পিআইওসহ এই কাজের সঙ্গে জড়িতদের আর্থিকভাবে ম্যানেজ করেই তালিকা গড়মিল করা হয়।
একাধিক ইউপি সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি’র বরাদ্দ থেকে মোটা অংকের টাকা চলে যায় পিআইও’র পকেটে। আর ভুয়া তালিকার বেশিরভাগ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় হয়ে থাকে।
প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্প সম্পর্কে আমার কাছে জানতে না চেয়ে বরং পিআইও’র কাছে থেকে জেনে নেন। তিনিই ভালো তথ্য পারবেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ‘এই সকল টাকা নেওয়ার কথা গুলো ভিত্তিহীন হিসেবে তিনি আরো বলেন, কর্মসৃজনী কাজ শেষ। যদি আমার কাছে লেবার কম থাকার বিষয়ে অভিযোগ থাকতো তাহলে যথাযথ ভাবে আমি ব্যবস্থা নিতাম।
এ বিষয়ে সচেতন মহলের দাবি, সরকার যে উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নসহ ছোটবড় দুর্নীতি দিনদিন বেড়েই চলেছে। এই কাজের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।