স্কুলের ছাত্ররা রোদ্রে বাহিরে দাড়িয়ে থাকায় ক্ষোভে প্রধান শিক্ষককে জুতা পেটা করলেন আওয়ামীলীগ নেত্রী সামসাদ রানু। তিনি সাবেক আলমডাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র। ঘটনাটি আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী পাইলট বালক বিদ্যালয়ে ঘটেছে। প্রধান শিক্ষককে অফিসে প্রবেশ করে জুতা পেটা করার ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এঘটনায় রিপোর্ট লেখাপর্যন্ত আইনগত ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খাঁন।
জানাগেছে, আলমডাঙ্গা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সামসাদ রানু ওরফে রাঙা ভাবি। গত কয়েক দিনে তীব্র দাবদহে অতিষ্ঠ জনজিবন। প্রাথমিক স্কুল গুলো বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল স্কুল চলমান রয়েছে। সামসাদ রানুর ছেলে অর্ক সে ওই স্কুলে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। বুধবার সকালে সামসাদ রানু তার ছেলের কাজের বিষয়ে স্কুলে আসেন। স্কুল সাড়ে সকাল ৯ টার বাজলেও কোন কক্ষ খোলা হয়নি। কিছুক্ষণ পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রবেশ করলে হঠাৎ চড়াও হয় সামসাদ রানু। ধাক্কা দিতে দিতে অফিস কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে প্রধান শিক্ষকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে একপর্যায়ে তার পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারতে থাকে। এতে প্রধান শিক্ষক শারীরিক ও মানসিক ভাবে লাঞ্ছিত হয়। ঘটনার পরপরই স্কুলের শিক্ষকেরা চড়াও হলে সামসাদ রানু ছটকে পড়ে। মুহুর্তে এঘটনাটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ভুক্তোভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউর ইসলাম খান বলেন, বিদ্যালয়ের মধ্যেই সবার সামনে সামসাদ রানুর আমাকে লাঞ্চিত করেছেন। মারধর করেছেন।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধ বার্ষিকী পরিক্ষা নেয়া হচ্ছিল। একই দিন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন পরিক্ষার দিন ছিল। অর্ধ বার্ষিকী পরিক্ষার জন্য সামষ্টিক মূল্যায়ন পরিক্ষা নিতে দেরি হচ্ছিল। সেই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। এরমধ্যে সামশাদ রানুর ছেলে সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অর্ক ছিল। তার গায়ে রোদ লাগার কারণে আমি বিদ্যালয়ে আসতেই আমাকে কলার চেপে ধরে টানতে টানতে বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষের দিকে নিয়ে যান। আমাকে কিলঘুষি মারতে থাকেন। তার পায়ের জুতা খুলেও মারধর করে।
আকস্মিক মারধরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আমি বয়স্ক মানুষ। এমনিতেই শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছি। পরিক্ষার শেষে আমি বাড়ি চলে এসেছি। বিষয়টি মোবাইলে ইউএনওকে জানিয়েছি।
অভিযুক্ত সামসাদ রানু বলেন, বিদ্যালয়ের কক্ষ না খোলায় আমার ছেলে সহ প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী সকাল ৯টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। তীব্র তাপদহে শিক্ষার্থীরা হাসফাস অবস্থা। সোয়া ১০টার পর প্রধান শিক্ষকের বিদ্যালয়ে আসলে আমি তার নিকট গিয়ে কক্ষের তালা খোলার কথা বলি। তিনি জানান, এই দায়িত্ব আমার না, সহকারি প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস ও কর্মচারি সিদ্দীকের। তিনি আমাকে উলটো বলেন, সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্যরা আপনাকে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। আমি তার জবাবে বললাম আমি এখানে কোন নেত্রী হিসেবে না, আমি অভিভাবক হিসেবে এসেছি। এরপরই আমি তার জামার কথা চেপে ধরে টেনে নিয়ে “তালা খোল” কক্ষের তালা খুলাইছি। তখন শিক্ষার্থীরা স্কাসে বসে।
প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, আমি অফিসের ভেতরেই ছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্যারকে মারধর শুরু করা হয়।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনি আলম নূর বলেন, এই বিষয়টি লোক মারফতে জেনেছি। প্রধান শিক্ষকও আমার নিকট মোবাইল করেছিল। আমি তাকে আমার কার্যালয়ে আসতে বলেছি। কেউ যদি অন্যায় করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন। তবে কাউকে মারধর করাটা এটা চরম অন্যায়। অভিযোগ প্রমানিত হলে ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।