আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইল বগাদি গ্রামে কৃষকের ৩ তিন বিঘা জমির পান ক্ষেত কেটে সাবাড় করে দিয়েছে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসিরা। ঘটনাটি ঘটেছে আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইল বগাদি পূর্বপাড়া মাঠে।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে। জানাগেছে, ভোগাইল বগাদি গ্রামের ঐ জমি নিয়ে দুইপক্ষের মাধ্যে কোর্টে মামলা চলছিল, প্রথম পক্ষ ক্ষমতার জোরে জমির মালিক মৃত জব্বার মন্ডল ও ভাদু মণ্ডল, জুবের মণ্ডলের ছেলে আব্দুল খালেক বলেন, এই জমি আমার বাবার জমি এবং দ্বিতীয় পক্ষ মৃত আব্দুল গনি মন্ডলের নামে এই জমি রেকর্ড হয় এতে দুই পরিবার থেকেই কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং আদালতের রায় বের হওয়ার পরে এই জমিতে আমাদের যাওয়ার কথা ছিল।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে মৃত গনি মণ্ডলের ছেলে আব্দুর রহিম ও বশির আলী ভোগাইল বগাদি গ্রামের গাং পাড়ার মৃত শমসের আলীর ছেলে হাসিবুল ইসলাম, আইয়ুব আলীর ছেলে আরিফুল ইসলাম, রোড পাড়ার মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে মোকাদ্দেস হোসেন, ভাঙতে পাড়ার মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে আশরাফুল আলম মঞ্জিল, মৃত আবদুল গনির ছেলে আব্দুর রহিম, বশির আলী, নজিম উদ্দিন, মৃত আব্দুল এর ছেলে রকিবুল ইসলাম, জহির উদ্দিনের ছেলে টোকন হোসেন, বিশুর ছেলে মনোয়ার হোসেন, রেজালের ছেলে বোরহান আলী, পার্শ্ববর্তী শালিকা গ্রামের ছেলে মহিবুল ইসলাম, ও অনুপ নগর গ্রামের রেজাল হক সহ অজ্ঞাত দের ভাড়া করে এনে আমাদের পান বরজ কেটে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার পান তসরুপ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে পানচাষী মৃত নবীরউদ্দীন মণ্ডলের ছেলে মিনাল হোসেন বলেন, আমি এই জমি লিজ নিয়ে ১০ কাঠা জমিতে পান চাষ করেছি আমার পান বরজ কেটে তসরুপাত করে দিয়েছে, নবীর উদ্দীন মণ্ডলের ছেলে মহিবুল ইসলাম বলেন, আমি ঋণ নিয়ে ১০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে পান চাষ করছি। পান বরজই আমার একমাত্র সম্বল ছিল, সেটা আজকে কেটে সাবাড় করে দিয়েছে এখন আমার সংসার চালানোর জন্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
এদিকে, মৃত পান্না হোসেনের ছেলে কলেজ ছাত্র মামুনুর রশীদ জানান, এখানে আমার লিজ নেওয়া ১০ কাঠা জমিতে পান চাষ করেছিলাম, এই বরজ থেকে পান বিক্রয় করে আমি সংসার চালায় ও আমার লেখাপড়ার খরজ চালাই, এখন আমি ছাত্র আমি তো অন্য কোন পেশায় জড়াতে পারি নি। আজ আমার পান খেত তারা কেটে দিয়েছে, কিভাবে আমি আমার সংসার চালাবো? আর লেখাপড়ার খরচ চালাবো, আমাকে সর্বহারা হয়ে পথে বসতে হবে।
মৃত বনমালীর ছেলে বলেন, এখানে আমার লিজ নেওয়া ৮ কাঠা জমিতে আমি পান চাষ করছিলাম, অভাবের সংসারে এর বেশি আমি পান চাষ করতে পারিনি, এক বেলা খেলে আরেক বেলা নিজের পান বরজে কাজ করে খায়, আজ আমার সেই সম্বল টুকুও কেটে ভেঙ্গে সাবাড় করে দিয়েছে। এখন আমি কি করব? আমি বলেছিলাম জমি যাদের হবে আমরা তাদেরকে লিজ দিয়ে দিব আমাদের পান বরজ কেউ যেন না ভঙ্গে।
মৃত আলী হোসেনের ছেলে তোসার আলী বলেন, এখানে আমার ৬ কাঠা জমিতে পান চাষ ছিল বর্তমান বাজারে আমি পান বিক্রি করতাম ১০০-২২০ দরে। আমার পান বরজ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে এখন আমি কি করতে পারি, সে আল্লার কাছে বিচার চায়।
মনসুর আলীর ছেলে কুতুব উদ্দিন বলেন, আমি লোকের জোন খেটে খায় এখানে আমার ৬ কাঠা জমিতে পান বরজ করেছিলাম, সেই শেষ সম্বল টুকুও তারা ভেঙ্গে সাবাড় করে দিয়েছে, আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ন্যায় বিচার চাই।
জুব্বার মণ্ডলের ছেলে আব্দুল খালেক বলেন, এখানে আমার পৈতৃক সম্পত্তি ১০ কাঠা জমিতে পান বরজ ছিল, যা আমি পান বিক্রি করতাম ১৫০ থেকে ২০০ শত টাকা পোন মূল্যে। কিন্তু আজ আমার পান বরজ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে, কিছু ভাড়াটে লোকজন আমাদের এই জমি গ্রামের গনির নামে রেকর্ড করে দিয়েছে। এ বিষয়ে কোটে মামলা চলছে। কিন্তু বিভিন্ন গ্রাম থেকে ও আমাদের নিজ গ্রামের লোকজন এসে আমাদের পান বরজ কেটে তছনছ করে দিয়েছে, আমরা এর বিচার চাই।
এদিকে মৃত আব্দুলের ছেলে রকিবুল ইসলাম এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি কোন পান ক্ষেত কাটতে যায়নি আমাকে মৃত আবদুল গনির ছেলে আব্দুর রহিম ডেকেছিল যে আমরা পান বরজ কেটে দিচ্ছি তুমি এসে নিয়ে যাও, তাই আমি টাকা নেওয়ার জন্য সেখানে গিয়ে ছিলাম।
মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি গরিব মানুষ আমি জোন খেটে আমার সংসার চালায় গতকাল রাতে এসে গনি মণ্ডলের ছেলে আব্দুর রহিম আমাদের জোন হিসেবে নিয়ে যায় এবং তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে আমার পান বরজ ভাঙতে হবে তাই আমরা কয়েকজন তার পান বরজ ভাঙ্গার জন্য গিয়েছিলাম। এবং পরে আমরা দেখি সেখানে গোলযোগ হবার সম্ভাবনা আছে এবং আমরা সেখান থেকে একসাথে যে কয়জন কাজ করছিলাম সবাই চলে এসেছি ।
এদিকে জিন্নাত আলীর ছেলে ইউনুস আলী বলেন, আমি আজ সকালে আসমানখালী বাজার থেকে পান বিক্রয় করে বাড়ি আসার সময় সোহাগ মোড়ে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আমার গলায় রাম দা ধরে মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে মোকাদ্দেস হোসেন ও মৃত শমসের আলীর ছেলে হাসিবুল ইসলাম বলে তুই যেন ওই পানবরজের জমির পাশে যাবিনা, তোকে ওই জমির পাশে পেলে জবাই করে ফেলবো।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আশিকুর রহমান, তিনি বলেন, এই জমি নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ চলছে এবং কোর্টে মামলা করা রয়েছে, আপনারা কোর্ট থেকে আপোষ মীমাংসা করে আসেন, কোর্ট যাকে রায় দেবে সেই ব্যক্তি জমির কাছে যাবেন, এর আগ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি ওই জমি দাবি করে জমিতে যেতে পারবে না।
মেপ্র/ইএম