স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইমরান হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে আবারও স্বামী-স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে ও গলায় আঘাত করে হত্যা করেছে দৃর্বৃত্তরা। নজির উদ্দিনকে প্রথমে হাত ও মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে। জমি-জমা সংক্রান্ত অথবা পূর্ব বিরোধের জেরে এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা জানান। দুর্বৃত্তরা হত্যার পর বাড়ির বাইরের গেটে তালা লাগিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পুলিশ গতকাল শনিবার বিকেলে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।
হত্যা রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্তে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
নিহতরা হলেন- আলমডাঙ্গা উপজেলার পুরাতন বাজারপাড়ার মৃত হাতেম আলির ছেলে নজির উদ্দিন (৬৯) ও তার স্ত্রী ফরিদা খাতুন(৬১)।
চুয়াডাঙ্গা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান লালন বলেন, নিহতের মেয়ে দিলারা পারভিন শিলা শনিবার সকালে প্রথমে পিতার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে বন্ধ পায়। পরে মায়ের মোবাইল ফোনে কল দিলে কেউ রিসিভ করেনি। এরপর শিলা ও তার স্বামী ওয়াহেদুজ্জামান লেন্টু মিলে আসেন বাবার বাড়িতে। মা-বাবাকে ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তারা একজন পথচারিকে বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকে ভেতরে পাঠায়। পথচারী বাড়ির ভিতরে ঢুকে নজির আহমেদকে গোসলখানার মধ্য পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।
শিলা বিষয়টি প্রথমে মোবাইল ফোনে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে জানালে তারা বাড়ির বাইরের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পুলিশ দেখতে পায় কাপড় দিয়ে হাত ও মুখ বাধা অবস্থায় নজির আহমেদের লাশ পড়ে আছে গোসল খানার মধ্য। ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে ও গলায় আঘাত করে। ফরিদা খাতুনের লাশ ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল। তার গলায় ও বুকে আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
পুলিশ সুরতাহল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। আর ঘটনাস্থলে পিবিআই, সিআইড এর একটি দল নমুনা সংগ্রহ করে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা জানায়, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ডাবল মার্ডার সংঘটিত হয়েছে। নজির আহমেদ স্থানীয় একই এলাকার স্বর্গীয় শীব নারায়ণ ভৌতিকার জমি জাল দলিল করে দখল করে নেয়। নজির আহমেদের আদালতে প্রায় ২০টির বেশি মামলা চলমান রয়েছে জমি-জমা নিয়ে।
স্থানীয়রা আরও জানান তিনি এলাকায় শত কোটি টাকার বেশি সম্পদ জাল দলিল করে অন্যত্র বিক্রি করেছেন। আলমডাঙ্গায় ৯ দিনের ব্যবধানে আবারও জোড়া খুনের ঘটনা ঘটলো। আইশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় উপজেলাবাসী নিরাপত্তাহিনতায় ভুগছেন। পুলিশি ভূমিকা জোরদার হলে এ ঘটনা ঘটতোনা।
নজির আহমেদ প্রায় ৪০ বছর আগে ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ড উপজেলার হুলিয়া গ্রাম থেকে আলমডাঙ্গায় এসে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে পুরাতন সাব-রেজিষ্টি অফিস ভবন সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী বসবাস করতেন। এ দম্পতির একমাত্র মেয়ে দিলারা পারভিন শিলা।
স্থানীয়রা আরও জানান, তিনি সিনেমা হল, চাতাল, বালিসহ বিভিন্ন ব্যবসা করতেন। নজির শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী স্বর্গীয় শীব নারায়ণ ভৌতিকার পোষ্যপুত্র হিসাবে পরিচিত ছিল। নজির জাল দলিল করে তার সম্পদ দখল করে নেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে শিব নারায়ণের ছেলে পবন কুমার ভৌতিকার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার ফোন রিসিভ করেননি।
আলমডাঙ্গা হারদী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইদুর রহমান বলেন, হঠাৎ মোবাইল ফোনে দেখি এখানে একটি হত্যাকান্ড ঘটেছে তা দেখতে ছুটে আসি। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার যে অবস্থা তাতে করে আমরা সাধারণ মানুষ চারম আতঙ্কের মধ্য জীবন-যাপন করছি। আলমডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকায় বেশ কিছু দিন ধরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। যা দু:খজনক ও বেদনাদায়ক। সুষ্ঠ ভাবে তদন্ত করে অপরাধীদের সনাক্ত করা হোক। আলমডাঙ্গাসহ চুয়াডাঙ্গায় শান্তি ফিরিয়ে আনা হোক।
নিহতের মেয়ে দিলারা পারভিন শিলা বলেন, জমি নিয়ে প্রতিবেশিদের সাথে বেশকিছুদিন ধরে বিরোধ ছিল। সরকারি জায়গায় ইজারা নিয়ে থাকতো আমার বাবা-মা। এ হত্যাকান্ডের বিচার চায় আমরা। আমার বাবা-মার মত ভাল মানুষ নেই। আমার অসুস্থ বাবা-মাকে যারা খুন করেছে আমি তাদের বিচার দাবি করছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে পুলিশের কয়েকটি দল। সব বিষয় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্য-দিবালোকে আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছেসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরানকে কুপিয়ে হত্যা করে মাসুদ রানা ও সাকিব হোসেনসহ বেশকয়েক জন। তাকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর দিনে ইমরানের পিতা বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলার প্রধান আসামী মাসুদ রানাকে পুলিশ ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে কুষ্টিয়ার একটি ছাত্রাবাস থেকে গ্রেফতার করে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, নিহত দম্পত্তি খুনের বিষয়ে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। খুব দ্রুতই খুনিদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি মার্ডার প্রসঙ্গে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনার পিছুনে কোন কিছু উদ্দেশ্য থাকে। আমরা প্রত্যেকটি দিক খতিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইমরান হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামী মাসুদ রানাকে কুষ্টিয়ার একটি ছাত্রাবাস থেকে গ্রেফতার করে। এই দম্পত্তি খুনের সাথেও জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।