পৃথিবী বদলাচ্ছে, এর সাথে বদলে যাচ্ছে মানুষের মন-মানসিকতা । পৃথিবী বদলের মূল শক্তি হিসাবে কাজ করছে স্থিতিশীলতা, টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক প্রগতি । আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে মানুষ একটি স্থিতিশীল পরিবেশের মাধ্যমে নিজেদের এগিয়ে নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে । আজকের বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয় । সবচেয়ে বড় কথা, দেশের জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এমন একটি জায়গায় এসে পৌঁছেছে, যেটি মানুষ আগে সেভাবে ভেবে উঠতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এর সূচনা ঘটলেও রাষ্ট্র বিরোধী অপশক্তি তা সফল হতে দেয়নি। এরপর বাংলাদেশ ক্রমাগত উল্টোপথে হেটে লক্ষচ্যুত হয়েছে। মানুষ আর আগের মতো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও, জাতিগত বিদ্বেষ, হত্যাযজ্ঞ, স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিতে চায়না । কারণ যারা স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করেনা, দেশপ্রেম যাদের মধ্যে নেই, যারা মীরজাফর-মোশতাকের মতো বিশ্বাসঘাতকের চরিত্রকে ধারণ করে, তাদের কাছে জনগণের পাওয়ার কিছুই নেই ।
মানুষ এখন বুঝে, কিসে তার ভালো, কিসে তার মন্দ । এর একটা ইতিবাচক ফলাফল এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি । বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের নামে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে । বিভিন্ন অপকৌশল, গুজব, মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তাদের সভা-সমাবেশগুলোতে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে বলে তারা যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলো তা বাস্তবে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে ।
তাদের সমাবেশগুলোতে তাদের নেতা-কর্মীদের দেখা গেলেও সাধারণ মানুষ তাদের এই আন্দোলের সাথে যুক্ত হচ্ছেনা । আবার তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চ্চা নেই বলে অনেক নেতা-কর্মী তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ।
অথচ তারা নিজেদের সীমাবদ্ধতাগুলো বিচার বিশ্লেষণ না করে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে । তাদের নিজেদের শক্তির উপর তারা ভরসা পাচ্ছেনা বলে অন্যান্য শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যা দেশের সাধারণ মানুষ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেনা । গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন হতেই পারে, কিন্তু এখন আন্দোলনের নামে অপশক্তিগুলো যা করছে তার কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নেই । আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবার মতো তাদের কোনো নেতা নেই, আসলে আন্দোলন কেন হচ্ছে সাধারণ মানুষ সেটিই বুঝে উঠতে পারছেনা ।
এর আগে ১০ ডিসেম্বর ২০২২ এ সরকার পতনের আল্টিমেটাম দিয়ে তারা মাঠ গরম করলেও সেখানে সাধারণ মানুষের কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা ছিলো না । বরং সেটা একটা প্রহসনের নাটকে পরিণত হয়েছিল । সাধারণ জনগণ বলছেন, যত গর্জে, তত বর্ষে না। সেই ধারবাহিকতায় ২৮ অক্টোবরকে টার্গেট করে মাঠে নামে দলটি। এর মূল উদ্দেশ্য কি, কেন এই আন্দোলন, এতে কাদের মঙ্গল, জনগণ তা বুঝে উঠতে পারছে না । অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন নয়, বরং রাষ্ট্র যে একটি স্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে তার গতিকে রুদ্ধ করা । যদি মনস্তাত্ত্বিক বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়, তবে এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে তারা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় একধরণের সংকটের মধ্যে পড়েছে । এর দায়দায়িত্ব তাদের নিজেদের, তাদের অতীত কৃতকর্মের ।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাদের মধ্যে নির্বাচন ভীতি কাজ করছে , কারণ তারা বুঝতে পেরেছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রের ভিত্তি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে, সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে, উন্নয়ন পরিকল্পনায় ফাইলবন্দী হয়ে না থেকে বাস্তবে পরিণত হয়েছে, মানুষ দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখছে, সেই উন্নয়ন মানুষের অর্থনৈতিক জীবনযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে যোগসূত্র গড়ে দিয়েছে । উন্নয়নের সাথে সাথে উন্নয়নের নীতিমালা প্রণীত হয়েছে । প্রযুক্তির উৎকর্ষতা মানুষের জীবনে গতি এনে দিয়েছে, মানুষের কর্মযজ্ঞ দেশের গন্ডি পেরিয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে । তরুণদের মধ্যে একসময় যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল, তা এখন আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাসে পরিণত হয়েছে । এর ফলে মাথায় হাত বুলিয়ে তরুণদের তারা আর বিপথগামী করতে পারছেনা, বরং তরুণরা তাদের এই ধরণের কার্যকলাপকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মূল্যায়ন করছে ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর থেকে ইতিহাসকে তারা নিজেদের মতো করে লিখেছিলো, প্রচার করেছিল । ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজম্মের উপর তারা মিথ্যাকে চাপিয়ে দিয়েছিলো । তারা ভেবেছিলো, মানুষ তাদের এই বিকৃত ইতিহাসকে সত্য বলে মেনে নিয়ে নিজেদের শেকড়ের শক্তি থেকে পথচ্যুত হবে । বাস্তবে তা ঘটেনি, বরং মানুষ এখন ইতিহাস জানছে, প্রামাণ্য দলিল থেকে উঠে আসছে ইতিহাসের নিখাদ সত্য । প্রমাণিত হচ্ছে. ইতিহাস বিকৃতির পিছনের কুশিলরাই ছিল দেশ ধ্বংসের মূল ক্রীড়ানক । বাঙালির আবহমান সাহিত্য, সংস্কৃতি, সম্প্রীতি, বিশ্বাস ও ভালোবাসার উপর তারা বিষ ঢেলে দিয়ে মনে করেছিল, বাংলার আপামর মানুষ ভুলে যাবে তাদের নিজেদের অস্তিত্বকে । তেমনটা ঘটেনি, বরং মানুষ এখন আরও বেশি সৃজনশীল, আরও বেশি মননশীল, আরও বেশি অগ্রসরমান হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের অবদান রাখছে ।
সারা পৃথিবীতে সংলাপ ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অনেক সংকটের সমাধান হলেও তারা সংলাপেও ভয় পাচ্ছে । সংলাপের আগেও অযৌক্তিক শর্ত জুড়ে দিয়ে তারা জনগণকে বুঝাতে চাইছে, তারা সংলাপ চাইলেও সরকার সংলাপে আগ্রহ দেখাচ্ছেনা । তাদের এই ধরণের দ্বিমুখীতা সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার পন্থা বলেই বিবেচিত হচ্ছে । নির্বাচন কমিশন তাদের সংলাপে ডাকলেও তারা সাড়া দেয়নি । সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে, তারা শান্তি চায়না, সংলাপ চায়না, নির্বাচন চায়না, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে পতিত করা, পরনির্ভরশীল করা, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা, প্রকৃত স্বাধীনতাকে হরণ করা । সারাদেশেও তারা আন্দোলন করতে পারছেনা,কারণ সারাদেশের তৃণমূল মানুষ বুঝতে পেরেছে, তাদের এসব আন্দোলনে জনগণের কোনো কল্যাণ নেই, বরং এসব আন্দোলন জনগণকে জিম্মি করার মাধ্যমে পিছিয়ে দেবার অপচেষ্টা । এখন তারা বলছে, আন্দোলন হবে ঢাকা কেন্দ্রিক । অথচ যেখানে জনগণের কোনো আগ্রহই নেই, সেই নিষ্ফল আন্দোলনের মূল্যইবা কতটুকু ।
এই সময়ে এসে যখন বাংলাদেশের মানুষ চিন্তা ও চেতনাকে ধারণ করে নিজেদের এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে তখন তাদের এই কর্মকান্ডকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচন করতে হলে গণতন্ত্রকে মানতে হবে, রাষ্ট্রের সংবিধানকে অনুসরণ করতে হবে, স্বাধীন নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে । সবচেয়ে বেশি দরকার জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করা, জনগণকে বুঝা, জনগণের সুখে দুঃখ অনুধাবন করে নিজেদের দেশপ্রেমিক হিসাবে প্রমান করা । এগুলোর বিন্দুমাত্র লক্ষন তাদের ভিতরে নেই । সাধারণ জনগণ খুব কাছ থেকে দেখেছে, তারা জনগণের জন্য কল্যাণমুখী উদ্যোগগুলোতে কিভাবে বাধা সৃষ্টি করেছে । পদ্মা সেতু এর একটি অন্যতম উদাহরণ । পদ্মা সেতুর মতো সব উন্নয়নকেই তারা বাধাগ্রস্থ করে জনগণের শত্রু হিসাবে কাজ করেছে, অনেকটা ট্রয়ের ঘোড়ার মতো । জনগণ এখন জানে, তারা সাধারণ মানুষের ভালো চায়না, বরং সাধারণ মানুষদের তারা নিজেদের প্রতিপক্ষ মনে করে । কারণ তারা মানুষের অধিকারের শক্তিতে বিশ্বাস করেনা, তারা বিশ্বাস করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাকে কিভাবে কুক্ষিগত করা যায় ।
দেশের সাধারণ মানুষ, এখন রাজনীতি বুঝে, অর্থনীতি বুঝে, নিজেদের পায়ে মাথা উঁচু করে গর্বের সাথে দাঁড়িয়ে বলতে পারে, আমরাও পারি, কেউ আমাদের রুখবার মতো নেই । যারা আন্দোলন আন্দোলন খেলছেন, তারা যত দ্রুত এগুলো বুঝতে পারবেন, তত তাদের মঙ্গল, তা না হলে রাজনীতি থেকে তাদের চিরকালের জন্য নির্বাসিত হতে হবে, তখন কপাল চাপড়িয়ে ভাগ্যকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ হবেনা ।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।