বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বিষয়টি যখন সাধারণভাবে মাথায় আসে, তখন আইবিএম ও গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নাম মনে হয়। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে নতুন প্রতিষ্ঠান এসে গেছে। তারা দাবি করছে, আগামী তিন মাসের মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করে ফেলবে।
ওই প্রতিষ্ঠানের নাম হানিওয়েল কোয়ান্টাম সলিউশনস। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হানিওয়েল ইন্টারন্যাশনাল ইনকরপোরেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এটি।
হানিওয়েলের দাবি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং পারফরম্যান্সের বিচারে তাদের তৈরি কম্পিউটারটি সবচেয়ে শক্তিশালী হবে। এ ক্ষেত্রে তারা ২০১৭ সালে আইবিএমের তৈরি কোয়ান্টাম ভলিউম কম্পিউটারটিকে ছাড়িয়ে যাবে। ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালে হানিওয়েল কোয়ান্টাম কম্পিউটিং খাতে ঢুকে ‘ট্র্যাপড-আয়ন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং’ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে।
কোয়ান্টাম ভলিউম শব্দটি কোনো সমস্যার তুলনামূলক জটিলতা বোঝায়, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে সমাধান করা যেতে পারে এবং সংখ্যাগতভাবে প্রকাশ করা হয়। কোয়ান্টাম ভলিউম কোয়ান্টাম সিস্টেমের বিভিন্ন মেট্রিকসের সমন্বয় করে কিউবিটগুলোর সামগ্রিক কর্মক্ষমতা পরিমাপ করে। হানিওয়েল দাবি করেছে, তাদের কম্পিউটারে কোয়ান্টাম ভলিউম হবে ৬৪, যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছর ধরে প্রতিবছর কোয়ান্টাম ভলিউম বাড়াতে কাজ করবে তারা।
গত বছর গুগলের সেকামোর দাবি করেছিল, তারা কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করেছে এবং তাতে ৫৩ কিউবিট রয়েছে। সাধারণ কম্পিউটারে যে কাজ সারতে ১০ হাজার বছর লেগে যেত, গুগল দাবি করেছে, তাদের কোয়ান্টাম কম্পিউটার সে কাজ ২০০ সেকেন্ডে করে দেখিয়েছে। কোয়ান্টাম মেকানিজমের জটিল অনেক সমস্যার সমাধান কোয়ান্টাম কম্পিউটার এক তুড়িতে করে ফেলতে পারে। ওই একই সমস্যার সমাধান করতে হালের সর্বাধুনিক কম্পিউটারের লেগে যায় শত থেকে হাজার হাজার বছর। এই বিষয়কেই বলা হয়ে থাকে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি। অর্থাৎ যখন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশ ওই সব জটিল সমস্যার সমাধান অত্যন্ত কম সময়ে করতে পারবে, তখনই বলা হবে যে তারা কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করেছে।
গুগলের তৈরি সেকামোর কোয়ান্টাম প্রসেসর নির্দিষ্ট যে কাজ ২০০ সেকেন্ডে সম্পন্ন করতে সক্ষম, তা বিশ্বের সেরা সুপার কম্পিউটারের সম্পন্ন করতে ১০ হাজার বছর লাগবে।
আইবিএম সম্প্রতি দাবি করে, তাদের ২৮ কিউবিটের কম্পিউটারে ৩২ কোয়ান্টাম ভলিউম রয়েছে।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট প্রটোকল দাবি করেছে, হানিওয়েল ও গুগল ছাড়াও মাইক্রোসফট, আইওন কিউ, কিউসিআই, ডি-ওয়েভ, রিগেটি, ওয়ানকিউবিট ও স্ট্রেঞ্জওয়ার্কস কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করছে।
উন্নত কিউবিট
সাধারণ কম্পিউটার তথ্য সংরক্ষণ করে ০ কিংবা ১-এর মাধ্যমে। মানে বাইনারি পদ্ধতিতে। কিউবিটের ক্ষেত্রে দুটি বিটেই একসঙ্গে তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। এতে ‘সুপার পজিশন’ নামে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার নীতি মানা হয়। তা ছাড়া কিউবিটগুলো একে অপরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। এই পদ্ধতিকে বলে ‘এনট্যাঙ্গলমেন্ট’। এই দুই পদ্ধতি মিলিয়ে কোনো সমস্যার সম্ভাব্য বহু সমাধান একই সময়ে পরখ করে দেখতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। তবে একটি সমস্যা হলো কিউবিট সহজেই ‘বিচলিত’ হয়ে ওঠে। সে জন্যই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল অংশ শীতল পাত্রে রাখতে হয়। অবশ্য আলাদাভাবে হলেও, মানে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করা সম্ভব না হলেও কিউবিটের মাধ্যমে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে অনেক কাজই দ্রুততার সঙ্গে করা যায়। সে কাজে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নকশা করার সময় কিউবিটের ভুল সংশোধনের জন্য একসঙ্গে একাধিক কিউবিট যুক্ত করে একক লজিক্যাল কিউবিটে পরিণত করে। মানে ব্যাপারটা হলো কোনো কোনো সঙ্গী কিউবিট যদি কাজ না-ও করে, তবু সার্বিকভাবে লজিক্যাল কিউবিট দ্রুতগতির কম্পিউটিং সেবা দিতে পারে।
সুত্র-প্রথম আলো