লকডাউনের মধ্যে মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে গান গাচ্ছিল ইতালীয়রা। বাদ্যযন্ত্রে সংহতির সুরও তুলছিল কেউ কেউ। ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’ বলে আশার বাণীও শোনাত তারা। তবে লকডাউনের তিন সপ্তাহ পার হতে না হতেই বদলে গেছে চিত্র।
ছবি: সংগৃহীত
লকডাউনের মধ্যে মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে গান গাচ্ছিল ইতালীয়রা। বাদ্যযন্ত্রে সংহতির সুরও তুলছিল কেউ কেউ। ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’ বলে আশার বাণীও শোনাত তারা। তবে লকডাউনের তিন সপ্তাহ পার হতে না হতেই বদলে গেছে চিত্র।
দারিদ্র্য জেঁকে বসতে শুরু করেছে। জেগে উঠছে বেসুরো ক্ষুধা। বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা ও সামাজিক অস্থিরতা। দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ইতালির সর্বশেষ বাস্তবতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন সব গান থেমে গেছে। দেশটির কিছু অংশে, বিশেষত দক্ষিণের দরিদ্র এলাকাগুলোতে বেড়েছে সহিংসতা। মানুষ এখন উপলব্ধি করছে সবকিছু ঠিক নেই।
নাপোলিস শহরের কারিতাস দিওচেসানা দি নাপোলির ধর্মযাজক সালভাতোরে মেলুসো বলেন, ‘মানুষ এখন আর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গান গায় না, নাচে না। তারা এখন আগের চেয়ে ভীত হয়ে উঠছে। এ ভীতির কারণ ভাইরাস নয়, বরং দারিদ্র্যের ভয় তাদের মনে বাসা বেঁধেছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তারা ক্ষুধার্ত। ফুড ব্যাংকগুলোর সামনে এখন দীর্ঘ সারি।’
উত্তরাঞ্চলের তুলনায় ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে করোনাজনিত মৃত্যুর হার অনেকটাই কম। তারপরও সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর মহামারীর গভীর প্রভাব পড়ছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা কাম্পানিয়া, কালাব্রিয়া, সিসিলি ও পুগলিয়ার মানুষ খাদ্য ও অর্থ সংকটে পড়েছে।
এর মধ্য দিয়ে এসব এলাকায় তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা। বিনামূল্যে খাবার দেয়ার জন্য ছোট দোকান মালিকদের বাধ্য করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কিছু এলাকায় সুপার মার্কেটে চুরি ঠেকাতে টহল দিচ্ছে পুলিশ।
স্বনির্ভর কিংবা চুক্তিভিত্তিক কাজ করা মানুষের উপার্জন বন্ধ রয়েছে, সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা আর কখনও চালু হবে কিনা তা অনিশ্চিত।
আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়া এমনই একজন পারিদে ইজিনে। সিসিলির পালেরমোর একটি রেস্তোরাঁর ওয়েটার তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পারিদে বলেন, ‘অবশ্যই লকডাউনের কারণে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। আমার স্ত্রী আছে, দুই সন্তান আছে।
সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে কোনোরকমে আপাতত আমাদের সংসার খরচ চলছে। তবে আমার জানা নেই কত দিন তা চলবে। আমি ব্যাংকে অনুরোধ করেছিলাম যেন তারা কিস্তির টাকা স্থগিত করে। তারা না বলে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতি আমাদের দিশেহারা করে দিচ্ছে।’
লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাস্যিমিলিয়ানো পানারারি বলেন, ‘লকডাউনের শুরুর দিকে মানুষ তাদের স্পৃহা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এখন তারা প্রচণ্ড ভঙ্গুর দশায় থাকা দেশের তিক্ত বাস্তবতা নিয়ে ভাবছে।’
সামাজিক এ অস্থিরতার মধ্যে ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে বলেছেন, সংহতি তহবিল থেকে সব পৌরসভাকে অবিলম্বে ৪৩০ কোটি ইউরো অগ্রিম দেয়া হবে। ফুড স্টাম্পে (পুষ্টিকর খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির ভাউচার) পরিণত করার জন্য মেয়রদের দেয়া হবে অতিরিক্ত ৪০ কোটি ইউরো।
তবে মেয়ররা বলছেন, যে তহবিল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিশেষ করে ফুড ভাউচার হিসেবে যে ৪০ কোটি ইউরো দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা একেবারেই অপর্যাপ্ত।
সুত্র-যুগান্তর