রমজানের সময় এমনিতেই আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন আসে। অনেকে পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি, বুক-পেটে ব্যাথা, বদহজমসহ নানা জটিলতায় ভোগেন। তবে খাবার গ্রহণে কিছুটা সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চললে এসব সমস্যার বেশিরভাগই এড়ানো সম্ভব।
রোজায় ইফতার, রাতের খাবার ও সেহরি খাওয়ার বিষয়ে কিছু নিয়ম মানতে হবে। আসুন জেনে নেই রোজায় কি ধরনের খাবার খাবেন?
ইফতার
১ ইফতারে খেতে পারেন পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুর। এটি নিমেষেই দেহে শক্তি যোগায়। ইফতার শুরু করুন পানি ও ২টি খেজুর দিয়ে। তবে ডায়াবেটিক রোগীরা ১টি খেজুর খেতে পারেন।
২. সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে এবং ধীরে ধীরে ইফতার করুন। সব খাবার একবারে খাওয়া চলবে না। এতে করে খাবার পরিপাকে সমস্যা হবে না, সেই সঙ্গে তৃপ্তি সহকারে খাওয়া যাবে।
৩ শরবতে চিনির পরিবর্তে গুড় বা মধু ব্যবহার করুন। এছাড়া ডাবের পানি, চিনি ছাড়া ফলের রস, লাচ্ছি, স্মুদি, বিভিন্ন ফ্রুট সেক, লেবু পানি বা স্যালাইনও রাখতে পারেন। ডায়বেটিক রোগীর খাবারে বাড়তি চিনি যোগ করা যাবে না।
৪. ভাজা-পোড়া খাবার খেতে হবে একটু হিসেব করে। অতিরিক্ত ভাজা খাবার শরীরে এসিডিটি, তৃষ্ণা, বদহজম, অস্বস্তি তৈরি করে। পিয়াজু, বেগুনি, আলু, মাংস ও সবজির চপ, বিভিন্ন পাকোড়া সপ্তাহের দিন হিসেবে ভাগ করে নিন।
৫. অল্প তেল, মসলায় রান্না করা ছোলার সঙ্গে শসা, টমেটো, লেবু, কাঁচা মরিচ, পুদিনা বা ধনে পাতার সালাদ খেলে ভিটামিন-সি’সহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যাবে। অনেকে কাঁচা ছোলা বা অঙ্কুরিত ছোলা খেতে পছন্দ করেন। যা খুবই স্বাস্থ্যকর। এই ছোলা মুখে ঘা সারাতে সাহায্য করে।
৬. ইফতারে খেতে পারেন মৌসুমি ফল। এসময় পেঁপে, তরমুজ, বাঙ্গি, কলা, মাল্টা, আপেল, আনারস, কমলা, পেয়ারা, আম পাওয়া যায়। ফ্রুট সালাদ করে খেলেও অনেক ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়া যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
৭. ১ কাপ দুধ বা দুধের তৈরি খাবার পুডিং, পায়েস, ছানা, সেমাই, ফ্রুট কাস্টার্ড আপনার প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করবে। দুধের সঙ্গে কাঠবাদাম যুক্ত করে খেতে পারেন।
৮. যারা এসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন তারা মুড়ি ভালো করে চিবিয়ে খেলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। কাঁচা পেঁপেও এক্ষেত্রে সাহায্য করে।
৯. চাল, ডাল, সবজি ও ডিম দিয়ে তৈরি নরম খিচুড়ি ইফতারের জন্য একটি ভালো খাবার। যদি কেউ নুডুলস খেতে চান তাহলে অল্প তেল, সবজি ও মাংস যুক্ত করে খেতে পারেন। তবে অবশ্যই অন্য খাবারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খেতে হবে।
১০. যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তারা ইসুবগুল, তোকমা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন।
রাতের খাবার রাতে অল্প পরিমাণে পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার প্রয়োজনীয় ক্যালরি চাহিদা পূরণ করবে। অল্প পরিমাণে ভাত, রুটির সঙ্গে মিক্সড সবজি, মাছ অথবা মাংস, সামান্য ডাল রাখতে পারেন।
সেহরি
সেহেরি সময় শেষ হওয়ার ৩০ মিনিট আগে থেকে খাওয়া শুরু করুন। এই সময়ের খাবারে জটিল শর্করা যেমন- লাল চাল, লাল আটা, ওটস, বার্লি, শস্য দানা খেলে অনেক সময় পর্যন্ত শক্তি পাওয়া যায়। কেননা এই জাতীয় খাবার ধীরে হজম হয় এবং সময় নিয়ে রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করে।
সেহরিতে প্রোটিন জাতীয় খাবার অবশ্যই রাখতে হবে। মাছ, মুরগির মাংস বা ডিম যেকোনো একটি খেতে পারেন। রোজায় ডাল জাতীয় খাবার পরিমাণে বেশি খাওয়া হয় বলে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের দিকে একটু খেয়াল রাখতে হবে।
এছাড়া রঙিন ও পানি জাতীয় সবজি যেমন-লাউ, পটল, পেঁপে, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, টমেটো, চালকুমড়া, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি খেতে পারেন। যেগুলো পাকস্থলীতে উত্তেজনা কমায় এবং সহজে হজম হয়।
ব্যায়াম
রোজায় ইফতারের ২ ঘণ্টা পর হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। তারাবির নামাজেও অনেকটা ব্যায়াম হয়ে যায়। সুত্র-যুগান্তর