করোনায় বন্ধ ছিল দু-বছর। ঈদের দিনেও ছিল বৃষ্টির বাগড়া। ঈদের দ্বিতীয় দিনে মুজিবনগর কমপ্লেক্সে দর্শনার্থীদের যেন ঢল নেমেছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে মুজিবনগরে ছুটে আসছে হাজারো দর্শনার্থী। মেহেরপুরের একমাত্র সরাকারি বিনোদন কেন্দ্র মুজিবনগর কমপ্লেক্সে দিনের শুরু থেকেই লোক সমাগম ছিল অনেক। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দুর-দুরান্ত থেকেও আসছে ভ্রমন পিপাসু মানুষেরা। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ভিড় করছেন ঐতিহাসিক আম্রকাননে। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরভিত্তিক বাংলাদেশের মানচিত্র, স্মৃতিসৌধ, আম্রকানন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন ম্যুরাল, সরকারি শিশুপরিবার, শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখছেন তারা।
মুজিবনগরের পাশাপাশি এবার সবার নজর কাড়ছে অনন্যা পার্ক। এখানে রয়েছে পশু-পাখির ভাস্কর্য। দৃষ্টিনন্দন বাগান, পুকুর, শাপলা, ফুলের বাগান, শিশুদের খেলাধুলার সরঞ্জাম ও দেশীয় গাছসমৃদ্ধ বাগান।
পরিবার পরিজন নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে আসা ইয়াসমিন আক্তার, সেলিনা আক্তার স্বর্ণা জানান, আমরা ঘুরতে যাওয়ার স্থান হিসেবে এই স্থানটিকে দুই কারণে বেছে নিয়েছি। ঐতিহাসিক জায়গা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধ জানি কিন্তু বর্তমান প্রজন্মকে এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য নিয়ে এসেছি।
দর্শনা থেকে আসা ফাহমিদা খানম ও প্লাবন জানান, আমার এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। তবে এখানে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। নেই বাচ্চাদের বিনোদনের কোন ব্যবস্থা। আর যাতায়াত ব্যবস্থা আরো উন্নত হলে ভালো হতো।
যশোর থেকে পরিবার নিয়ে মুজিবনগর কমপ্লেক্সে বেড়াতে আসা জাকির হোসেন, খাইরুল ইসলাম তপুসহ তার পরিবারের সদস্যরা জানান, আমার স্বপ্ন ছিল মুজিবনগর দেখবো, আমি এখানে এসে গর্বিত। বর্তমান প্রজন্মের জানা উচিৎ কত রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এখানে প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল। তাই আমার দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। এখানে এসে দেখে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
করোনার লাগাতার প্রকোপে গত দু-বছর পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্স। দর্শনার্থী না যাওয়ায় কমপ্লেক্সের ছোট ছোট ব্যবসায়ী, ইজারাদারসহ খেটে খাওয়া মানুষদের আয় রোজগারও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এ বছরের মৌসুমের শুরু থেকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগরে দর্শনার্থীরা আসা শুরু করায় সবার মুখে হাসি ফুটেছে। কমপ্লেক্সের ইজারাদারসহ ভাসমান ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের শুরু থেকেই প্রচুর পিকনিকের গাড়িসহ দর্শনার্থীরা মুজিবনগরে বেড়াতে আসা শুরু করায় বেচাকেনাও মোটামুটি ভালো হচ্ছে। তাই এই ঈদ মৌসুমে গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কমপ্লেক্সের ইজারাদারসহ ভাসমান ব্যবসায়ীরা।
কমপ্লেক্সের ভাসমান ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে ঈদ মৌসুমে দর্শনার্থী বেশি হয়, বেচাকেনাও ভালো হয়। এ বছর শুরু থেকেই প্রচুর দর্শনার্থী আসায় ব্যবসা ভালো হচ্ছে, বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।
এদিকে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে পুলিশ,টুরিষ্ট পুলিশ, আনসার সদস্য ও সাদা পোশাকের পুলিশ। মেহেরপুর মুজিবনগর কমপ্লেক্সে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য দ্বায়িত্বরত আনসার কমান্ডার আলী মোহাম্মদ জানান, কোনো দর্শনার্থী যেন কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আমরা সব সময় তৎপর রয়েছি। আমাদের এখানে ৭৩ জন আনসার সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে।