পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পোস্ট অফিসে পারিবারিক সঞ্চয় বীমায় টাকা জমা করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নানের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন। ২০১৭ সালে তিনি এক কালীন আট লক্ষ টাকা সঞ্চয় জমা করেন। মনোয়ারা খাতুন অজান্তে এবং স্বাক্ষর ছাড়াই তার হিসাব নম্বর থেকে গায়েব হয়েছে প্রায় তিন লক্ষ টাকা। দায়িত্বরত পোস্ট মাস্টার বলছেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মনোয়ারা খাতুনের আত্নীয় এ টাকা উত্তোলন করেছে। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের দাবী টাকা হাতি নিয়েছে দায়িত্বরত পোস্ট মাস্টার। মনোয়ারা খাতুন টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে ঘুরছেন অনেকের দ্বারে দ্বারে। কোথায় গেলে সুরাহা পাবেন তাও জানেন না ভুক্তভোগী ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধর্মচাকী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নানের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন। বিগত ৩/০৭/২০১৭ সালে যিনি গাংনী উপজেলা পোস্ট অফিসে পারিবারিক সঞ্চয় বীমা খোলেন। যার হিসাব নং-১৪৩১,বহিনং-পসপঘ-১০৯৯৩৪৬,পসপঙ-০৯৮০৩০১,পসপচ-০৪৭৫৪৫৮,। উক্ত সঞ্চয় নম্বরে ৮লক্ষ টাকা সঞ্চয় জমা করেন। সঞ্চয়পত্রে নমিনি করা হয় মনোয়ারা খাতুনের ছেলে আব্দুল হানিফকে। লাখ প্রতি ৯১২ টাকা মাসিক মুনাফা উত্তোলন করার কথা থাকলেও অধ্যবধি তিনি কোনো টাকায় উত্তোলন করেননি। বছর খানেক আগে মনোয়ারা বেগম মুনাফার টাকা উত্তোলন করতে গেলে গাংনী উপজেলা পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম তাকে টাকা প্রদান করতে গড়িমশি করেন। বৃদ্ধ মনোয়ারা খাতুন অসুস্থ্য শরীরর নিয়ে ১৭ দিন অফিসে যান। তবুও তিনি টাকা পাননি। পরে তিনি পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলামের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে সঞ্চয়পত্র ও কুপন ফেলে চলে আসেন। কয়েকদিন পর তিনি ফেলে আসা সঞ্চয়পত্র ও কুপন আনতে পোস্ট অফিসে গেলে সঞ্চয়পত্র ও কুপনের খোঁজ জানেন না বলে জানান পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম। মনোয়ারা খাতুন বিষয়টি তার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নানকে জানালে গাংনী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার নং-৫৪৯। পরে পোস্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার হিসাব নম্বর থেকে ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা গায়েব হয়েছে গেছে। টাকা গায়েবের বিষয়ে কারন জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নানের সাথে গড়িমশি করেন পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম। এবং কুপনের মাধ্যমে মনোয়ারা খাতুনের নাতি ডিউক হোসেন এ টাকা উত্তোলন করেছে বলে জানান। তবে ডিউক হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি নানি মনোয়ারা খাতুনের সঞ্চয় পত্রের নমিনি নন, এবং টাকা উত্তোলনের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবী করেন। ড্উিক হোসেন টাকা উত্তোলনের প্রমান দেখতে চাইলে তার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম।
মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমি পোস্ট অফিসে শুধু টাকা রেখেছি। কোনদিন টাকা উত্তোলন করিনি। তাছাড়া আমার নমুনা স্বাক্ষর রয়েছে। আমার নমুনা স্বাক্ষর ছাড়াই টাকা প্রদান করল কিভাবে? আমার নাতি আমার সংসারে থাকে। সে ছাত্র । এতগুলো টাকা সে কি করবে? । এটা কি ছেলের হাতের মোয়া! আমি সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম। আমাকে পাত্তা দেয়নি। আমার সঞ্চয় পত্র থেকে পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম টাকা উত্তোলন করেছে। আমি উক্ত টাকা ফেরত পেতে চাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান বলেন, বিষয়টি আমি জানার জন্য গাংনী পোস্ট অফিসে গেলে আমাকে কোনো ভাবেই সহযোগীতা করেনি পোস্ট মাস্টার। পরে কুষ্টিয়াতে যোগাযোগ করার পর জানতে পারি আমার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের হিসাব থেকে বিভিন্ন তারিখে ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আমি এখন কি করব, সুরাহা পাচ্ছিনা। তাছাড়া বর্তমান ডিজিটাল সময়ে আমার এতগুলো টাকা গায়েব হয়ে যাবে তা মানতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ একটি রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার সাথে পরিচালিত হয়। সেখান থেকে টাকা গায়েব হবে কেন? আমি এর ন্যয্য বিচার চাই।
গাংনী উপজেলা পোস্ট মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানো কোন নমুনা স্বাক্ষর সংরক্ষণ করা হয়না। শুধুমাত্র গ্রাহকদের কুপন দেয়া হয়। উক্ত কুপন যিনি আমাদের প্রদান করবেন তিনিই টাকা পাবেন। তবে মনোয়ারা বেগমের নাতি ডিউক টাকা উত্তোলন করেেছ। উপজেলায় কতজন গ্রাহক এমন সঞ্চয় রেখেছেন তার পরিসংখ্যাণ নেই বলেও জানান নজরুল ইসলাম।
মেহেরপুর জেলা পোস্ট মাস্টার জহুরুল হক রানা বলেন, প্রতিটি সদস্যের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। এবং প্রতিটি গ্রাহক সঞ্চয় খোলার সময় নমুনা স্বাক্ষর দিয়ে রাখেন। আমরা তা সংরক্ষণ করি। যারা কুপন নিয়ে আসেন তাদের নমুনা স্বাক্ষর যাচাই করা হয়ে থাকে। কুপন হাতে অন্যরা আসলেও মোবাইলের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে নেয়া হয়। টাকা গায়েব হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এই প্রথম শুনলাম বিষয়টি ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল দেখভাল করেন। আমি উনার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে সহযোগীতা করব।
ডেপুৃটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল(কুষ্টিয়া) খন্দকার মাহাবুব হাসেন হোসেনের সাথে অফিসিয়াল টেলিফোনে একধিকবার যোগাযোগ করা হলে টেলিফোন রিসিভ না করাই মন্তব্য লেখা সম্ভব হয়নি।