মাইন্ড এইড হাসপাতালে মানসিক চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমকে মারধরের পর পরীক্ষা করানোর জন্য ডাক্তার ডাকা হয়। ভাইরাল ভিডিওতে এমনটি বোঝা গেলেও বাস্তবে ভিন্ন গল্প। আসলে নার্সদের ডাক্তার সাজিয়ে সেখানে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের বাবুর্চি রুমা আক্তার।
তিনি বলেন, পুলিশ স্যার মারা যাওয়ার পরে তার আত্মীয়-স্বজনকে দেখানোর জন্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অক্সিজেনের সিলিন্ডার আনে। মৃত ব্যক্তিকে বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখানোর জন্য অক্সিজেনে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর আদাবর এলাকায় মাইন্ড এইড হাসপাতালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন রুমা। হাসপাতালটিতে প্রায় দুই মাস কর্মরত আছেন বাবুর্চি রুমা আক্তার। তিনি বলেন, ভিডিওতে দেখছি পুলিশ স্যারের জ্ঞান ফেরানোর জন্য বুকে যারা চাপা দিয়ে চেষ্টা করছেন তারা কেউ ডাক্তার না। তারা প্রত্যেকেই নার্স। ওই সময় তিনজন নার্স ছিল, অপর্ণা কেকা ও সুমাইয়া।
বাবুর্চি রুমা বলেন, হাসপাতালের ভেতর কি হয় আমরা জানি না। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে যা দেখছি তা নিয়ে মিছা কথা বলবো না। শুনছি ওইদিন (সোমবার) একটা রোগী আসবে। ম্যানেজার স্যার রোগীকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দোতলায় নিয়ে আসেন। ওই (সাউন্ড প্রুফ রুমে) রুমে যখন নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় তখন রোগী রুমে ঢুকতে চায় না। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে এমনটাই দেখছি। রোগীকে টেনে-হেঁচড়ে ৬-৭ জন মিলে ওই রুমে নিয়ে যায়। আপনারাও তো সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখছেন।
রুমা বলেন, দুই-তিন জন মানুষ পুলিশ স্যারের বুকের ওপর বসে তার হাত-পা বানছে। বাঁধার পরে স্যার নিস্তেজ হয়ে গেলেন। এরপরে আমি গিয়ে আমার সঙ্গে রান্না করে ওই মেয়েটিকে বলি। মেয়েটাও এসে সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখলো। পরে আমরা হাসপাতলে রান্নাঘরে চলে আসি। হাসপাতালের স্টাফদের জন্য রান্না করতে থাকি। এর কিছুক্ষণ পরে শুনি স্যারে মারা গেছেন।
রুমা আরও বলেন, ধস্তাধস্তির মধ্যেই তিনি মারা গেছেন। পরে তার হাতে-পায়ে পানি দেওয়া হয়। লোক দেখানোর জন্য অক্সিজেন নিয়ে আসে হাসপাতালে। মরা মানুষকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করে। পুলিশ স্যারের মারা যাওয়ার খবর তার ভাই-বোনেরা সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারেনি। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারে। অন্য রোগীদেরকে পুলিশ স্যারের মতো ধস্তাধস্তি আর মারতে কখনো দেখিনি। এমনটা কেন হলো আমি বলতে পারি না।
এ ঘটনায় পাবনা মানসিক হাসপাতালের মনরোগ বিশেষজ্ঞ মকবুল হোসেন পাশা বলেন, মানসিক চিকিৎসার নামে রোগীর সঙ্গে এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ কখনোই করতে পারেন না। মেন্টাল অ্যাক্ট এটাকে কোনোভাবেই সাপোর্ট করে না। মাইন্ড এইড হাসপাতাল যেটা করেছে এটা অত্যন্ত ঘৃণ্যতম কাজ।
উল্লেখ্য, সোমবার (০৯ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই কর্মচারীদের ধস্তাধস্তি ও মারধরে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন পরিবার।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, হাসপাতালে ঢোকার পরপরই আনিসুল করিমকে ৬ থেকে ৭ জন টেনে-হেঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। হাসাপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাথার দিকে থাকা দুইজন হাতের কনুই দিয়ে আনিসুল করিমকে আঘাত করছিলেন। এ সময় একটি কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুল করিমের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর তাকে যখন উপুর করা হয়, তখনই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এ ঘটনায় সোমবার রাতে প্রথমে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরে আরও একজনকে আটক করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র আনিসুল করিম ৩১ বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এক সন্তানের জনক আনিসুলের বাড়ি গাজীপুরে। সর্বশেষ আনিসুল করিম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনারে দায়িত্বে ছিলেন।
সূত্র: বাংলানিউজ