বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে করোনা পজিটিভ আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে লড়াই করে যাওয়া এক যুবকের নাম মো: আসাদুল ইসলাম।
কুষ্টিয়ায় গড়ে ওঠা বেসরকারি স্বাস্থ্য চিকিৎসা কেন্দ্র সনো হসপিটাল’র সিনিয়র ব্রাদার পোস্ট হিসেবে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আসাদুল ইসলাম করোনাকালীন বিভিন্ন জায়গায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা ঔষধ পথ্য সেবা দিয়ে এসেছেন। চিকিৎসকের নির্দেশে তিনি এসব রোগীদের সেবার জন্য এ পর্যন্ত ৭৫ জন রোগীদের সেবা দিয়েছেন তিনি। তারা সবাই সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন।
এ কাজে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে, তারপরেও তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মানুষের সেবায়। এখন পর্যন্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তবে তার এই সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মানুষের সেবায় কাজ করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু এই করোনাকালীন আবার করোনা ভাইরাস পজিটিভ মানুষকে সেবা করার মতো কঠিনতম কাজও আমি করেছি। আর এই কাজের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগের চিকিৎসক ডা: নাসিমুল বারী বাপ্পী ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জ্যেষ্ঠ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এসএম মুসা কবির। কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়, একেবারেই মানবিকতার বোধ থেকে আমি তাদের পাশে ছিলাম। সুস্থ্য করার জন্য দায়িত্ব পালন করেছি। তাদের সেবা করার চেষ্টা করেছি এবং ভবিষ্যতেও সেবা করবো।
অক্সিজেন দেওয়াসহ বিভিন্ন ঔষধ খাওয়ানো এবং সেবা দিয়ে আসা ছিলো তার দায়িত্ব।
সরাসরি করোনা রোগীর সেবার ব্যাপারে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনায় আক্রান্ত হলে মানুষ যে কতটা অসহায় হয়ে পড়ে তার নির্মম উদাহরণ ছিলাম আমি। আমার নিজেরও করোনা হয়েছিলো। তখন আমার প্রতিবেশী আমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছিলো। সে সময় আমি ছাদে পোষাক নাড়তে গেলে আমাকে নিষেধ করা হতো। আমাকে বন্দী থাকতে বলা হতো। করোনার থেকে মানুষিক যন্ত্রণাটা আমাকে কুঁরেকুঁরে খাচ্ছিলো।
পরে আমি সুস্থ্য হয়ে এই করোনা রোগীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করলাম। কুষ্টিয়ার অনেক করোনায় আক্রান্ত অসুস্থ্য রোগীর বাসায় গিয়ে হোম সার্ভিস দিতাম। রোগীর দেখভাল করা, ঔষধ খাওয়ানো, অক্সিজেন দেওয়া, অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজের মাপা, তাপমাত্রা মাপা, খাবার দেওয়া, শরীরে ইনজেকশন পুশ করাসহ সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া দায়িত্ব ছিলো আমার।
এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেখতাম সেসব করোনা রোগীরা কত অসহায়। পরিবার পরিজনরা কাছে আসতে চায় না। দূরে দূরে থাকে। খাবার দিতে চাইনা। ওয়ান টাইম প্লেটে ও গ্লাসে পানি পান করতে দিতো তাদের। এসব কষ্ট আমাকে কষ্ট দেয়।
মানুষের সেবা করে তাঁকে সুস্থ করে তোলার ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও এই বিপদের সময় করোনায় আক্রান্ত মানুষের সেবায় আমি কেবল দায়িত্ব পালন করেছি।
তিনি বলেন আমি মানুষ হয়ে যদি মানুষের উপকারে না আসি তাহলে আমি কিসের মানুষ? যোগ করেন তিনি।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য হয়ে ওঠে কুষ্টিয়া শহরের ব্যবাসায়ী বাবু অজয় সুরেকা বলেন, করোনার সময়ে মানুষের চিকিৎসা সেব দিতে ভয় পাচ্ছিলেন অনেক চিকিৎসক। সেখানে আসাদুল সত্যি তার মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। আমি নিজেও আক্রান্ত ছিলাম। খুব ভয় পেয়েছিলাম সে সময়। তিনিই আমার পাশে এসেছিলেন। আমার ঔষধ থেকে শুরু করে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী আমাকে সেবা সহযোগীতা করছে। এতে করে তার কোন বিশেষ চাহিদাও ছিলো না। যদি সত্যিকারের করোনা যোদ্ধা হিসেবে কেউ থাকে তাহলেই এই আসাদুলের নামই আগে আসবে।
নারী বাতায়নের সভাপতি সাফিনা আনজুম জনী বলেন, আমরা করোনাকালীন ফাইন্ড এ ফরচুন ও নারী বাতায়ন সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম করতে গিয়েও করোনা রুগীদের সেবার জন্য এই আসাদুল ইসলামের স্বরব উপস্থিতি দেখতে পেয়েছি। তিনি নিজেই ছুটে গেছেন জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় করোনার রোগীদের বাড়ি বাড়ি সেবা করার জন্য। সত্যি সে মানবিক কাজ করেছে এই সময় পর্যন্ত।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জ্যেষ্ঠ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এসএম মুসা কবির বলেন, সত্যি আসাদুল ইসলাম ব্রাদার হলেও তিনি এ করোনাকালীন সময়ে অনেক রোগীকে সেবা করেছে। তর জন্য আমাদের হাসপাতালের অনেক চাপ কমেছিলো।