করোনা পজিটিভ সনাক্ত হওয়ার পর আক্রান্ত ব্যক্তিকে একটি ফোন দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন মেহেরপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অলোক কুমার দাস। এমন অভিযোগ করেছেন খোদ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনরা। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তার দাবি এ তথ্যগুলো মিথ্যা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই করোনা আক্রান্ত হন উজুলপুর গ্রামের রহিমা খাতুন(৭৮)। ওই দিন বিকালে তাঁর ছেলে রেজাউল হকের মোবাইলে ফোন দিয়ে ডা. অলোক কুমার দাস বলেন, আপনার মাকে আইসোলেশনে রাখেন। কোন সমস্যা হলে এই নম্বরে জানাবেন। এতেই করোনা চিকিৎসা শেষ।
শহরের তাঁতীপাড়ার মোখলেসুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হন ২০ জুলাই। বিকালে ডা. অলোক কুমার দাস তাঁকে ফোন দিয়ে বলেন আপনার রিপোর্ট খারাপ আইসোলেশনে থাকেন। তারপর মোখলেসুর কি চিকিৎসা নিলেন কি আদৌ নিলেন না। আর খোজ নেয়নি কেউ এ অভিযোগ মোখলেসুরের।
গত ২৫ জুলাই করোনা আক্রান্ত হন উজুলপুর গ্রামের এনামুল হক। সন্ধ্যার দিকে তাঁকেও ফোন দিয়ে ডা. অলোক কুমার দাস জান আপনি পজিটিভ। বাড়িতে আইসোলেশনে থাকেন। আর যে ওষুধগুলো খাচ্ছেন ওগুলো নিয়মিত খান।
এভাবেই চলছে মেহেরপুর সদর উপজেলার নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা করোনা রোগীদের চিকিৎসা।
অথচ ডা. অলোক কুমার দাস মেহেরপুর প্রতিদিনকে জানান, সনাক্ত হওয়ার পরপরই তালিকা ধরে সকলকে আইসোলেশনে থাকার কথা বলা, প্রেসক্রিপশন করে দেওয়া, তার শরিরের খোঁজ খবর নেওয়া এবং পুলিশকে নিয়ে বাড়ি লকডাউন করা হচ্ছে। কিন্তু আদৌ এগুলোর কিছুই করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আপনি যে তথ্যগুলো দিচ্ছেন তা মিথ্যা।
সীমান্তবর্তী মেহেরপুরেও করোনা সংক্রমণে দেখা দিয়েছে ঊর্ধ্বগতি। জেলাজুড়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। করোনা আক্রান্ত সিংহভাগ রোগীই থাকছেন হোম আইসোলেশনে। কিন্তু তাদের খোঁজ নেওয়ার যেন কেউ নেই। যদিও করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের সময় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের খোঁজখবর নেওয়া হতো নিয়মিতভাবে। আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে কোনোভাবেই বাইরে ঘোরাফেরা করতে না পারেন সেজন্য অনেক বাড়িও লকডাউন করে লাল কাপড় টাঙিয়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আবার আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ সহ সার্বিক খোঁজখবর রেখেছেন স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এসবের বালাই নেই। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারের লোকজন কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন সেই খবরও রাখছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। অনেক ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগী ও তার সংস্পর্শে আসা রোগীর স্বজনেরা অনায়াসে বাইরে ঘোরাফেরা করছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করছেন অনেকেই। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না পরামর্শ বা চিকিৎসাসেবা।
্এ বিষয়ে মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দিন মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্ব করোনা রোগীদের সকল খোঁজ খবর নেওয়া । এর ব্যতায় হলে তার দায় তিনি এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।