আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহর মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার জাতীয় সংসদের ভাষণে এই দুই নেতাকে স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যাদের সব সময় পাশে পেয়েছি, তাদের মধ্যে দুই আপনজনকে একদিনেই হারালাম, এটি খুবই কষ্টের।
এদিন এই দুই সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে সংসদে আনা একটি শোক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। এর আগে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, একই দিনে পরপর দুজনের মৃত্যু খুবই কষ্টকর। আমাদের এই সংসদে বারবার শোক প্রস্তাব আনতে হচ্ছে।
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী দুই নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তাদের পরিবার সদস্যদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
নাসিম ও আব্দুল্লাহকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশে ফেরার পর রাজনীতি করার মত পরিবেশ ছিল না। পদে পদে আমাকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ সময় যে দুজনকে আমি সব সময় পাশে পেয়েছি, একই দিনে তাদের হারালাম।
‘ওয়ান-ইলেভেনের’ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তখনকার সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের সময় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কারাগারে থাকাবস্থায় স্ট্রোক করে পড়ে ছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় কারাবন্দি সালমান এফ রহমানের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স সবসময় জেলগেইটে রাখা থাকত তার পরিবারের পক্ষ থেকে। ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে মোহাম্মদ নাসিমকে হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় বলে তিনি সেই যাত্রায় বেঁচে যান। তবে ওই সময় তার শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যায়।
আবেগাপ্লুত আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। মাত্র ১০ তারিখে (১০ জুন) আমরা পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু করলাম। তখন একজন মাননীয় সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। শোক প্রস্তাব নিয়েছি।
কয়েকটা দিন মাত্র গেল। আজ ১৪ তারিখ। আমরা হারালাম আমাদের সংসদের সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে। সকালে পেলাম তার মৃত্যুর খবর, আর রাতে ১০টা-সাড়ে ১০টায় আবদুল্লাহ সাহেবের কথা শুনলাম অসুস্থ। হাসপাতালে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে না গিয়ে নিয়ে যাওয়া হল সিএমএইচে। যাওয়ার পথে জাহাঙ্গীর গেইট পার হতে না হতে একটা অ্যাটাক হল। খুব অল্প সময়ে মধ্যে পরপর তিনটা অ্যাটাক। একই দিনে দুজনের মৃত্যু। আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর…।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করেনাভাইরাসে এমন একটি অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যে দলের কেউ মারা গেলে তার পরিবারের কাছে ছুটে গিয়ে সান্ত্বনাটুকু তিনি দিতে পারছেন না।
সংসদে আসতে বাধা পেয়েছেন জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, আজকে আমি সংসদে আসব, কিন্তু আমাকে অনেক জায়গা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। ভীষণভাবে বাধা দেয়া হয়েছে, ‘না না আপনি যাবেন না, নেত্রী যাবেন না’। আমি বললাম গুলি, বোমা, গ্রেনেড কত কিছুই তো মোকাবেলা করে করে এ পর্যন্ত এসেছি। এখন কী একটা অদৃশ্য শক্তি তার ভয়ে ভীত হয়ে থাকব আর পার্লামেন্টের মেম্বার, আমাদের আওয়ামী লীগের পরিবারের একজন সংসদ তাকে হারিয়েছি, আর আমাদের কেবিনেট সদস্য একজন, তাকে হারালাম- আর সেখানে আমি যাব না! এটা তো হয় না।
অন্যদের মধ্যে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মতিয়া চৌধুরী, মৃণাল কান্তি দাস, হাবিবে মিল্লাত, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলেন ৭২ বছর বয়সী নাসিম। ৯ দিন লাইফ সাপোর্টে থেকে শনিবার সকালে মারা যান বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক। এই শোক না কাটতেই একই দিন রাতে বেইলি রোডের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ। তাকে ঢাকা সিএমএইচে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। সে সময় জানানো হয়েছিল, ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর ‘হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছিল। মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায়, তিনি করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত ছিলেন।
যুগান্তর রিপোর্ট