দীর্ঘ অনাবৃষ্টির পর এক ঘন্টার ঝুম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেলো মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ সাপ্তাহিক হাট।
কেদারগঞ্জ হাটের ইজারাদার ও স্থানীয় ইউপি সদস্য রাকিবুল ইসলাম বলেন, বেলা ১২ টার দিকে সব্জী ও মাছ ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনের মতই ব্যবসা শুরু করেন। স্থানীয় ক্রেতারাও আসতে শুরু করেন হাটে। বেচা কেনা যখন জোরে শোরে শুরু হয়েছে। বেলা ৩ টার দিকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে প্রায় ঘন্টা ব্যাপি চলে। বৃষ্টির সময়ে ব্যবসায়ীরা তাদের চোটের মালামাল তুলে নিয়ে নিরাপদ স্থানে আসতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের আলু, পটল, কাঁচা মরিচ, শাক সব্জীসহ অন্যান্য কাঁচা মাল হাটু পানিতে ভাসতে থাকে।পরে ৪ টার দিকে বৃষ্টি থেমে গেলেও হাটু পানি জমে থাকে হাটে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে হাটু পানিতে দাঁড়িয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতারা ক্রয় বিক্রয় চালিয়ে নেন।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকারকে প্রতি বছর ভ্যাটসহ প্রায় ৩ লাখ টাকা দিয়ে হাট ডাকতে হয়। অথচ, হাটের কোনো উন্নয়ন নেই। এখানে সরকারিভাবে একটি টিউবওয়েল ও দুই টি গণসৌচারাগর স্থাপন করা হলেও টিউবওয়েল ও সৌচাগার অকেজো হয়ে যাওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতারা উভয়ে সমস্যায় পড়ছে প্রতিনিয়ত। হাটটিতে প্রায় ৩ শতাধিক ব্যবসায়ী ব্যবসা করলেও এখ্যানে শেড রয়েছে মাত্র একটি। যেখানে মাত্র কয়েকজন সব্জী বিক্রেতা ব্যবসা করতে পারেন।অনেক আগে হাটের মধ্যে মাত্র একটি ড্রেন নির্মাণ হলেও সেটি এখন আর পানি নি:স্কাশন হয়না। মাছ ব্যবসায়ীদের ময়লা পানি যাওয়ার ফলে ড্রেনটি প্রায় মৃতু হয়ে পড়েছে।এবিষয়গুলো নিয়ে মুজিবনগর ইউএনওকে বারবার মৌখিক আবেদন করার পরেও হাটটির উন্নয়নে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সব্জী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে এই হাটটিতে ব্যবসা করছি আমি।এই প্রথম হাটটি পানিতে ডুবে গেছে। এখানে একটি ড্রেন থাকলেও মৎস্য আড়তের ময়লা পানি ফেলার ফলে ড্রেনটি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এটি সংস্কার করার দাবী করেন এই ব্যবসায়ী।মাছ ব্যবসায়ী নাজিরাকোনা গ্রামের জহির হোসেন বলেন, আমি এই হাটে বসে ২৫ বছর মাছের ব্যবসা করি। এই প্রথম হাটু পানি জমে যাওয়া দেখলাম। তিনি বলেন, এখানে নিয়মিত কর দিলেও কোনো উন্নয়ন চোখে দেখিনি। হাটে পানি জমার কারণে ক্রেতা আসছেনা। আজকে বেচাকেনাও নেই।
স্থানীয় ক্রেতা বাগোয়ান গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, সব কিছুই ভিজে গেছে। এই ঝাল পেয়াঁজ কিনলে রাতের মধ্যেই পচে নষ্ট হয়ে যাবে।
মানিকনগর গ্রামের ক্রেতা রসুল শেখ বলেন, কাঁদার মধ্যে বাজার করা সম্ভব নয়। এছাড়া পানির উপর ভাসছে আলু পটুলসহ অন্যান্য সব্জী। এই সব্জী কিনে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যাবেনা। তাই বাজার না করেই ফিরে যাচ্ছি।
আকাশ রহমান ও গৌরিনগর গ্রামের রমজান আলী বলেন, পানির বিড়ম্বনার কারণে বাজার না করেই ফিরছি। বাজারের সব্জী কিনলে পচে যাবে।
সব্জী ব্যবসায়ী লিটন হোসেন, নওশাদ আলী ও আব্দুল কাদের বলেন, যখন ব্যবসা শুরু হবে, ঠিক সেই সময় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টিতে ক্রেতারা পালিয়ে গেলেও আমাদের সব সব্জীই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছুটা বিক্রি করতে পারলেও অধিকাংশ সব্জীই পচে যাবে।
হাটটির সমস্যা নিয়ে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হাট বাজার রক্ষাণা বেক্ষণ ও সংস্কার কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এছাড়াও কিছু সংগঠণ ও বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠণগুলোও কাজ করেন। প্রতি বছরই চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে হাট বাজারগুলোর সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য চাহিদা চাওয়া হয়। তাদের দেওয়া চাহিদা অনুযায়ী সেসব হাট বাজারের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কেদারগঞ্জ হাটটির সভাপতি ও বাজারের ইজারদারদের সাথে কখা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।