২০২০ এর পুরো সময়কে গেল এক দশকে অপরাধ কিংবা অপরাধ নির্মূলের সবচেয়ে আলোচিত বছর ধরা হয়। অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার রেশ শেষ হতেই, পাপিয়া কাণ্ডসহ নানা অপরাধ নির্মূলের শুদ্ধি অভিযান বছরজুড়ে বেশ আলোচিত।
করোনাকালেও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা মাদক নির্মূলে অভিযান শেষ না হতেই একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা দেশবাসীকে আরো অস্থির করে তোলে। অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢেলে দেশকে আরো উত্তপ্ত করে কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড।
২০২০ সাল দেশের জন্য যতটা অপরাধবহুল, মহামারির আবির্ভাব ততটাই নির্মম আর আলোচিত করেছে শতাব্দীর ইতিহাসকে। বছরের শুরুতেই ক্যাসিনোকাণ্ডের মূলোৎপাটন শেষ হতেই উঠে আসে মাদক আর বাইজী সম্রাজ্ঞী পাপিয়াকাণ্ড।
২২ ফেব্রুয়ারি স্বামী সহযোগীসহ পাপিয়া র্যাবের হাতে ধরা পড়লে দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয় তার পাপের সম্রাজ্য। বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ আর পাচঁতারকা হোটেলের প্রায় কোটি টাকার প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটের আলোচনা রাজধানী থেকে সীমান্ত জনপদেও আলোড়ন তোলে।
মার্চে পাপিয়ার সম্রাজ্যে ধ্বস নামতেই, মানব সম্রাজ্যকে সংক্রমিত করে ভয়াল ত্রাসের ছোবল বসায় মহামারি করোনা। সুদূর চীন থেকে ইতালি আমেরিকা হয়ে বাংলাদেশ। দুর্নীতির নতুন রুপ দেখে বাংলাদেশ। মানবিক এই সময়টাতেও করোনা থেকে রক্ষার ঢাল মাস্কের কৃত্তিম সংকটে বিপুল অর্থ তুলে নেয় অসাধু চক্র।
দেশবাসী অসততার চুড়ান্ত রুপ দেখে করোনা টেস্ট শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই। নমুনা নিয়ে টেস্ট না করিয়েই হাজার হাজার মানুষকে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে পুরো দেশকেই সংক্রমণ ঝুঁকিতে ফেলে দেয় বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল আর জেকেজি হেলথকেয়ার।
রিজেন্ট মালিক সাহেদ প্রতারণায় বহুমুখী প্রতিভা দেখিয়ে এমএলএমসহ তথাকথিত নানা ব্যবসার মাধ্যমে মানুষকে ঠকিয়ে হাতিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। একসময় বনে যান রাজনৈতিক বিশ্লেষকও। অবশেষে জালিয়াতিতেই কারাগারের বাসিন্দা হন তিনি। একইভাবে করোনায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়ে ধরা পড়েন টেস্ট জালিয়াতির খলনায়িকা জেকেজির ডা. সাবরিনাও। হাজারো মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলে স্বামীসহ সাবরিনা দম্পতি এখন কারাগারে।
করোনাকালেও মাদক চোরাকারবারের অপবাদ থেকে এতটুকুও মুক্তি পায়নি দেশ। দেশজুড়ে অভিযান আর মাদকের ব্যবসা সবই চলে দেদারছে। সিলেট এমসি কলেজে গৃহবুধূকে ধর্ষণ, নোয়াখালীতে আরেক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে অমানবিক নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় ফুঁসে ওঠে দেশ। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় রাস্তায় নেমে আসে প্রতিবাদী মানুষ।
জুলাইয়ে দেশব্যাপী ধর্ষণ বিরোধী জনরোষের আগুনে ঘি ঢেলে দেয় কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদকে সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশ গুলি করে হত্যা করলে। এ ঘটনার উত্তাপ ছড়ায় দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন পর্যন্ত।
উত্তাপের আগুন আরো ছড়ায় সিলেট বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনা। লালমনিরহাটে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে এক মুসল্লী যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা শোকাহত করে পুরো দেশকে।
শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়ে শরিয়তপুর ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ২৬ বাংলাদেশিকে লিবিয়ায় আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্র ব্রাশফায়ারে হত্যা করলে। অপরাধের রাশ টেনে আদাবর মাইন্ড কেয়ারে চিকিৎসাধীন সিনিয়র এএসপি আনিসুলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা।
বছরজুড়ে নানা অপরাধের লাগাম টানতে জনদাবির মুখে সংশোধিত হয় ধর্ষণ রোধে ফাঁসির দণ্ড। সিলেটে রায়হান হত্যার মূল অভিযুক্ত এসআই লিয়াকত। রায় আসে বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডেরও। চার্জশিট দেয়া হয় সিনহা হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলার।
সূত্র : নিউজ টোয়েন্টিফোর।