মেহেরপুর সদর উপজেলার বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ এবার ছাত্রদের ভয়ে বিদ্যালয় আসলেন না।
প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে তাঁর অফিস রুমে তালা লাগিয়ে দিনভর বিক্ষোভ করে বিক্ষব্ধ ছাত্ররা। ফলে বিদ্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) কোনো ক্লাস হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার দিনভর এই আন্দোলন করেন। এসময় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহি সদস্য ও গ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি নিয়ামুল হক, স্বেচ্ছাসেবকলীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি আকরামুল হক, বারাদী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকার সাথে যৌন কেলেংকারী, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ভর্তি ফিসসহ নানা অজুহাতে অর্থগ্রহণের অভিযোগ এনেছে বিক্ষোভকারী এসব শিক্ষার্থীরা।
ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও একজন সহকারী শিক্ষিকার ভিডিও ফেইসবুকগুলোতে ভেসে বেড়াচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গভীর রাতে প্রধান শিক্ষক আবুল কালা আজাদ ও ওই সহকারী শিক্ষিকা একটি বাড়ি থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালানোর চেষ্টা করছেন। কিছু যুবক তাদের আটকিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষিকা যুবকদের পা ধরে বিষয়টি না জানানোর অনুরোধ করছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষক নানাভাবে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন।
শিক্ষার্থী নাজাত আলী বলেন, আমাদের কাছে সে এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফ্লাপের সময় ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। আমরা তার এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই সে আমাদের ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকী দিতো।
এছাড়া অন্যান্য শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ২০২১-২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ সরকারীভাবে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও অদ্যবধি সে টাকা ফেরত দেননি। শিক্ষার্থীরা বারবার তার কাছে আসলেও সে টাকা ফেরত দেননি।
ষষ্ঠ শ্রেনীর একজন ছাত্রী অভিযোগ করেন সহকারী শিক্ষিকা আমাকে স্কেল দিয়ে মেরে হাত কেটে দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ছাত্রী বলেন, বিভিন্ন কায়দার আমাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা তুলে থাকেন শিক্ষকরা।
স্থানীয় চা দোকানী কালাম বলেন, আমার মেয়ের জন্য টিসি চাইতে গেছিলাম প্রধান শিক্ষকের কাছে। কিন্তু সে সেটা দিতে মোটা অংকের টাকা দাবী করে। সেখানে স্থানীয় মেম্বরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকে বলেও সেই টিসি নিতে আমাকে টাকা দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের লজ্জা স্বরম কিছুই নেই।
সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন, প্রধান শিক্ষক এককভাবে সব ধরণের কাজ করে থাকেন। আমাদের কোনো কিছুই জানান না তিনি। অতিরিক্ত টাকা পয়সা উত্তোলনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু কেউ তার কিছুই করতে পারবেনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি। তাকে আমরা কিছু বললে হত্যার হুমকী পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। আমরাও তার ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। তার বিরুদ্ধে সারা বছরই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে থাকে। তারপরেও সে কোনো কিছু মনে করেনা। তারা অভিযোগ করেন বর্তমান সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন ও জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হক তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পয়সা গ্রহণ করায় তারাও এই প্রধান শিক্ষকের সব অপকর্মকে বৈধ করে দেন। আমরা এই প্রধান শিক্ষকের কারণে নানাভাবে অপমান বোধ করি।
উল্লেখ্য, শিক্ষকদের টিউশন ফিস আত্মসাৎ, অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষকদের সাথে দূর্ব্যবহারসহ জাল সার্টিফিকেট বিক্রি, আদালতের মামলায় দুদকের তদন্ত, বারাদী বাজার কমিটির সভাপতি আলাউদ্দীন হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে।