সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত শনিবার ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দিয়েছেন। কাওলা প্রান্তের টোল প্লাজায় গাড়ি প্রতি মাত্র ৮০ টাকা করে টোল দিয়ে নতুন এই পথের প্রথম যাত্রী হন সরকারপ্রধান। আর গতকাল রবিবার তা উন্মুক্ত হয়েছে সর্বসাধারণের জন্য। রাজধানীবাসীর জন্য উন্মুক্ত হয়েছে সেই নতুন এক পথ। দেশের প্রথম উড়াল সড়কপথ এটি। এই পথ ধরে নির্ঝঞ্ঝাটে, ভোগান্তিহীনভাবে, দ্রুততম সময়ে চলাচল করতে পারছেন নগরবাসী।
রবিবার সকাল ৬টা। বৃষ্টিস্নাত সেপ্টেম্বর। ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে বন্ধুদের নিয়ে কেবল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাবেন বলে এসেছেন অনেকে। সবার আগে একটা সেলফি তারপরে স্বপ্নের যাত্রা। সরেজমিনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার) ও কয়েকটি ছোট পিকআপ ভ্যান এর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ কোনও প্রকার বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কিছু মোটরসাইকেল সাইকেলচালক এক্সপ্রেসওয়ে উঠতে চাইলে পুলিশ তাদের নিচের পথ দিয়ে চলাচল করার কথা জানান।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের শুরুতে বেশিরভাগই ব্যক্তিগত যানবাহন উঠছে, কোনও বাস বা ভারী যান উঠতে দেখা যায়নি। নিচে দিয়ে যাওয়া এক বাস চালককে উপর দিয়ে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে অনেকগুলো ব্যাপার আছে। আমরা পুরো রাস্তাতেই যাত্রী তুলে থাকি। আমাদের টোল এর টাকাটা কীভাবে উঠবে। এসব সমাধান হয়নি। ফলে এখনই সবাই উপর দিয়ে যাচ্ছে না।
তবে মোটরসাইকেলের আগ্রহ রয়েছে ষোলআনা। গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর সেতু ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এই উড়ালসড়ক পথে আসতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। তবে পথচারী, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল আপাতত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর চলবে না। রবিবার সকাল থেকেই মোটরবাইক নিয়ে একাধিক চালক উঠতে চেয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে অনুমতি না থাকায় পুলিশি বাধায় তিনি যেতে পারেননি।
বিশিষ্টজনের অনেকেই এই দিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠেছেন। তারা শুরু থেকেই লাইভ করেছেন পুরোটা পথ। এবং বাংলাদেশের এই বদলে যাওয়া নিয়ে তাদের আবেগ জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যানবাহন ওঠানামার স্থান:
উত্তরা থেকে দক্ষিণ অভিমুখী যানবাহন ওঠার স্থান–
১. হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা,
২. প্রগতি সরণি এবং বিমানবন্দর সড়কের আর্মি গলফ ক্লাব।
কোথায় নামবেন?
১. বনানী কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউ;
২. মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে ও
৩. ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের পাশে
দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর অভিমুখী যানবাহন ওঠার স্থান
১. বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর এবং দক্ষিণ লেন;
২. বনানী রেলস্টেশনের সামনে।
নামার স্থান–
১. মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে;
২. বনানী কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউ’র সামনে বিমানবন্দর সড়ক;
৩. কুড়িল বিশ্বরোড ও
৪. বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের সামনে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে। ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পুরো সুফল পেতে আরও প্রায় একবছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
দেশের প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে তৈরি হয়েছে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠানামার জন্য মোট ৩১টি র্যাম্প রয়েছে যার দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ১১ কিলোমিটার র্যাম্পসহ এই অংশটির মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে এই অংশের ১৫টির মধ্যে ১৩টি র্যাম্প খুলে দেওয়া হয়েছে। বনানী ও মহাখালীর র্যাম্প নির্মাণ শেষ হলেই খুলে দেওয়া হবে।