ব্রিটেনসহ ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশে এবার করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। আলজাজিরার খবর অনুসারে, নতুন করে ওমিক্রনের সংক্রমণের তালিকায় যুক্ত হলো জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র ও ইতালি। করোনার এই নতুন ধরন সর্বপ্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়ার পর দেশটির ওপর সবার আগে ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ব্রিটেন। ধীরে ধীরে অন্যরাও ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা জারি শুরু করে।
এর মধ্যেই ইউরোপে ব্রিটেনের পর জার্মানি ও ইতালিতে ওমিক্রনের অস্তিত্ব পাওয়া গেল। নেদারল্যান্ডসে আংশিক লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। সর্বশেষ অতি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের আতঙ্কে কর্তৃপক্ষ দেশ জুড়ে আংশিক লকডাউন জারি করতে বাধ্য হয়েছে। কমপক্ষে আগামী তিন সপ্তাহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক ভেন্যু বিশেষ করে ক্যাফে, জাদুঘর ও সিনেমা হলো অবশ্যই বন্ধ থাকবে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ যেন না বাড়ে এবং পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্যই কর্তৃপক্ষ এমন কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে এবার সব বিদেশি নাগরিককে জন্য সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে ইসরাইল কর্তৃপক্ষ। ইসরাইলে এরই মধ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশিদের জন্য পুরোপুরি সীমান্ত বন্ধ করতে প্রস্তুত সংশ্লিষ্টরা।
অতিসংক্রামক ওমিক্রন শনাক্তের জেরে আবারও ধাক্কা লেগেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। ধস নেমেছে বিশ্বের বড় বড় পুঁজিবাজারে। ২৯ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম এক ধাক্কায় ৬৮ ডলারে নেমে এসেছে। পৌনে দুই বছরের করোনার ছোবলে তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতি মাত্র ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। তখনই করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নতুন সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বকে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবর বলছে, গত শুক্রবার বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ১০ শতাংশের বেশি। করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরনের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পোশাকের বৃহত্তম বাজার ইউরোপে আবারও লকডাউনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মহামারি মোকাবিলায় ইউরোপ যাতে সফল হয় সেই প্রত্যাশাই করছেন বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকরা, কারণ পরিস্থিতি খারাপ হলে ইউরোপের বাজারে তাদের রপ্তানি কমে যেতে পারে। তবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলাদেশেও। আবার কি বন্ধ হয়ে যাবে সবকিছু? আমদানি-রপ্তানিতে যে গতি ফিরে এসেছিল, তা কি থমকে দাঁড়াবে। প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় দেশগুলোর পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন দেশের পোশাক প্রস্তুতকারীরা। রপ্তানি বাজারের সাময়িক ধীরতার মধ্যেও তারা আশা করেছিলেন, এবার হয়তো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডগুলো তাদের অর্ডার স্থগিত করবে না।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯-এর প্রথম ঢেউয়ের সময় বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা তাদের ৩১৫ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের পোশাকের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করেছিল, যা দেশের অন্তত ১ হাজার ১৩৬টি কারখানার ওপর প্রভাব ফেলেছে। যদিও পরবর্তী সময়ে আবার অর্ডার ফিরেছে। কিন্তু ধাক্কার প্রভাব রয়েগেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৮ থেকে ১০টি দেশ নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে, তাহলে অবশ্যই এর প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিখাতের ওপর পড়বে। তবে, কোনো একক দেশের বিধিনিষেধ গার্মেন্টস ব্যবসায়ে তেমন প্রভাব ফেলবে না ।
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে শেয়ারবাজারের কিছু বিনিয়োগকারীর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে কিছু বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়েছেন। ফলে গত সপ্তাহের বড় পতন দেখা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল। যে কোনো নেতিবাচক বিষয় শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে সার্বিকভাবে বর্তমান শেয়ারবাজার বিনিয়োগবান্ধব। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত আতঙ্কে বিক্রির চাপ না বাড়িয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করা।