বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে করোনার ক্রান্তিকালেও। বিশ্বে করোনা বাসা বেধেছে এবং রূপ বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অতিমারি করোনায় বিশ্বে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাচ্ছে এখনও, যদিও রোগ প্রতিরোধে টিকা তৈরি হয়েছে এবং তার প্রয়োগ এগিয়ে চলেছে বিশ্বব্যাপী। প্রায় দেড় বছর হতে চলেছে বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবা হুমকির সম্মুখীন। এর মধ্যে শক্তহাতে , বলিষ্ঠ নেতৃত্বে, স্নেহময়ীরূপে, মানবসেবায় হাত বাড়িয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন।
গরীব এ দেশে মানুষের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি কিভাবে করা যায়, তা তিনি নিয়েছেন পরিকল্পিত হাতে। একে একে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ১০ টাকা কেজি চাল, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, শিশু কার্ড (৩০ কেজি চাল), কৃষি উপকরণ, ইদ উপহার (১০ কেজি চাল), মৎস্যখাতে আর্থিক সহায়তা, কৃষিক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা, গরুর খামারিদের প্রণোদনা, ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ বাড়ি, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণ, প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পোশাক পরিচ্ছদ ও উপবৃত্তির টাকা, দুপুরে টিফিন এছাড়াও ফ্রি বই-পুস্তক প্রদান মাধ্যমিক পর্যন্ত সরকার নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পশু ও হাঁস-মুরগী পালনে আর্থিক সহয়তা প্রদান, কৃষিখাতে বৈদ্যুতিক সুবিধা প্রদান করছে। শীতকালে বয়স্কদের মধ্যে কম্বল বিতরণ, বিদ্যুৎ লাইনের সহজলভ্যতা এবং বিদ্যুৎ লাইন দেয়া সম্ভব না হলে সৌরবিদ্যুৎ প্রদান, খাবার পানির সংকট নিরসনে পাইপসহ টিউবওয়েল প্রদান, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাংক প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প ২-এ এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকায় ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। এভাবে তিনি তাঁর দেশের জন্য, মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন, দেশের জনগণ আজ তা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অল্প সংখ্যক মানুষ এ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিভিন্নভাবে। তাই সরকারের দেয়া অনুদানের টাকা যাতে প্রকৃত প্রাপকের হাতে সরাসরি যায়, প্রধানমন্ত্রী সেজন্য মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এ টাকা পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নম্বর এন্ট্রি হতে ভুল হওয়ায় কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বর্তমানে এগুলো সংশোধনের কাজ চলছে। আশা করা যায় অনতিবিলম্বে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জীবন রক্ষার্থে দেশের সকল জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হচ্ছে। এর ফলে নিম্নআয়ের শ্রমজীবি এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত বহুমানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসজনিত কারণে কর্মহীনতা ও আয়ের সুযোগ হ্রাসের কবল থেকে দেশের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে যাচাই-বাছাই করে প্রায় ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থসহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
এ বছর করোনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ লাখ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ লাখ পরিবারকে মাথাপিছু ২৫০০ এবং ৫০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। গতবছর থেকে এ ‘নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান’ কর্মসূচি চালু করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবছরও করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে প্রধানমন্ত্রী থেকে সরাসরি নগদ অর্থ প্রেরণ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ ৩৫ লাখ পরিবার সরাসরি ইএফটির’র মাধ্যমে তাদের নির্দিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে বা ব্যাংক একাউন্টে এই অর্থ সহায়তা পেয়ে যাচ্ছেন।
গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে যে সকল নিম্নআয়ের পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মহীন হয়ে পড়েছিল, তাদেরকে সহায়তার জন্য ‘নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ নিম্নআয়ের পরিবারকে পরিবার প্রতি ২,৫০০ টাকা করে ৮৮০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা সরাসরি উপকারভোগীর মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে বা ব্যাংক একাউন্টে প্রদান করা হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় চলমান করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারকে এ বছরও পরিবার প্রতি ২,৫০০ টাকা করে মোট ৮৮০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
-২-
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ বছর সংঘটিত ঝড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ৩৬টি জেলার ৩০ লাখ ৯৪ হাজার ২৪৯ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ১০ হাজার ৩০১ হেক্টর ফসলি জমিসম্পূর্ণ এবং ৫৯ হাজার ৩২৬ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মর্মে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে তথ্য পাওয়া যায় এবং এতে করে ১ লাখ কৃষক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯ এর ফলে কর্মহীন এবং ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকদের জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা হারে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার সুপারিশ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ বাবদ ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা (নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর) প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। তবে, কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীতব্য তালিকাটি চূড়ান্ত হলে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে। অর্থমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অতিদরিদ্র, কর্মহীন নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী যাতে এ কার্যক্রমের আওতায় আসে, সে লক্ষ্যে বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্যোগপ্রবণ, অতিদরিদ্র এলাকা এবং জনসংখ্যার অনুপাত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক ইত্যাদি পেশার নিম্নআয়ের লোকজন যাতে এ আর্থিক সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকৃত দরিদ্র ব্যক্তি চিহ্নিত করা হয়েছে, যাতে কেবল মাত্র প্রকৃত অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী এ অর্থ পায়।
এবারে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অর্থ বিভাগের বাজেটের অধীন ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তহবিল’- এ বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে নির্বাহ করা হবে বলে জানা গেছে। কোভিড-১৯ এর বিস্তাররোধ কল্পে সার্বিক বিধিনিষেধ আরোপ করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, গৃহকর্মী, মটর শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশায় নিয়োজিতদের পুনরায় আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়েছে। সরকারের এ কর্মসূচি বিশেষভাবে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে অব্যাহত থাকবে, সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এটাই সকলের প্রত্যাশা।
বিশ্বের সকল দেশের কাছে এখন প্রধান সমস্যা করোনা মহামারি। আমাদের দেশও আজ এ নিয়ে কঠিন সময় পার করছে। ঠিক এমনই এক সময়, যখন কেউ কারো দায়িত্ব নিতে অপারগ, তখনই দেশের হাল আরো শক্তভাবে হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রিয় শেখ হাসিনা। তাঁকে সহযোগিতা করতে, নিজ ও দেশকে বাঁচাতে আমরা ধৈর্যসহকারে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো, এ মহামারি ক্রান্তিকাল মোকাবিলা করবো এ হোক আজকের অঙ্গীকার।
#
পিআইডি- শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম (৫ম পর্যায় প্রকল্প কার্যক্রম)
৩০.০৯.২০২১