করোনাভাইরাস (COVID-19) একটি তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ। এটি গুরুতর সংক্রমণ, যা সাধারণ শ্বাস-প্রশ্বাসকে প্রভাবিত করে এবং ভাইরাস সংক্রমণের কারণ হয়ে থাকে। ধূমপানের ধোঁয়া ফুসফুস টিস্যু এবং সারা শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। এটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহের সুরক্ষা করতে পারে না।
ধূমপানের ফলে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সংক্রমণের মাত্রা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ধূমপান করে না এমন ব্যক্তির চেয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সিগারেটের ধোঁয়া এবং বাষ্পীয় অ্যারোসল অথবা ই-সিগারেট ফুসফুসের প্রদাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত রোগব্যাধির প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান বা ই-সিগারেট ধূমপায়ীদের করোনাভাইরাস দ্বারা মারাত্মক সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ধূমপান ফুসফুসের প্রতিরোধ ক্রিয়াকে দমন করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদি ধূমপায়ী এবং ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা উভয়েই ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছেন, যা নতুন ভাইরাসজনিত রোগ হিসেবে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে আরও মারাত্মক হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধূমপান এবং সম্ভবত ই-সিগারেটের বাষ্প করোনাভাইরাস থেকে মারাত্মক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। চীনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চেয়ে নারীর হারের চেয়ে পুরুষের হার কিছুটা বেশি। চীনের একটি মেডিকেল জার্নালে দেখা গেছে, ধূমপানের ইতিহাস রয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা ১৪ গুণ বেশি।
প্রচুর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে- ধূমপান ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে। নিয়মিত ধূমপান করার ফলে এটি বায়ুপথে সিলিরি ক্লিয়ারেন্সকে বাধা দেয়। বাতাস থেকে টক্সিন এবং শ্লেষ্মা বের করে আনার জন্য এবং কাশির সময় ফুসফুস পরিষ্কার করার জন্য এরা দায়বদ্ধ এবং ধূমপান করলে তখন তা প্রভাবিত হয়। ফুসফুসে শ্বাসকষ্টের সংক্রমণের সময়, নিউট্রোফিল নামক শ্বেতরক্ত কোষের প্রদাহ দেখা দেয়। গবেষণা থেকে এটি স্পষ্ট, ধূমপান করোনাভাইরাসের প্রভাবকে আরও খারাপ করে তোলে।
যদি কেউ ধূমপান ত্যাগ করতে চান, তবে এটি খুব ভালো সময়। আমরা এ সংকটের মধ্য দিয়ে যতটা সম্ভব মানুষকে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর রাখতে এবং ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি, ক্ষত নিরাময়সহ শরীরের অন্যান্য বিষয়ে উন্নতি করতে সহায়তা করে পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব কমিয়ে আনতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, যেসব শিশু ধূমপায়ীর সংস্পর্শে আসে, তাদের তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। অতএব ধূমপায়ী ধূমপান বন্ধ করলে পরিবারের ধূমপান সম্পর্কিত অসুস্থতার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
পরোক্ষ ধূমপান এক্সপোজার হ্রাস করা, বিশেষত বাচ্চাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফুসফুসের অন্যান্য ভাইরাস দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে মারাত্মক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এটি একই রকম হতে পারে। এ জন্য ধূমপায়ীদের যদি দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে, তবে অতিরিক্ত যত্ন নেয়া উচিত। সুতরাং এখনই যারা ধূমপান ছাড়তে চান, তাদের নিকোটিনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির (এনআরটি) সন্ধান করা প্রয়োজন। এটি আমাদের সবার জন্য উদ্বেগজনক সময় এবং মানুষ নিজের সুরক্ষা এবং অন্যকে সুরক্ষার উপায় সন্ধান করছে। এ সময় ধূমপান বন্ধ করা বা থামানো সেরা কাজগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে।
# সূত্র: যুগান্তর #