কোভিড-১৯ মহামারীতে ব্রাজিলে রেকর্ড ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লক্ষাধিক মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রাজিলই একমাত্র দেশ যেখানে মৃত্যু ৫০ হাজার ছাড়াল। দেশটিকে করোনার ‘হটস্পট’ বিবেচনা করা হচ্ছে।
এমতাবস্থায় বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় দেশটির প্রেসিডেন্ট বলসেনারোর সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার পদত্যাগ চেয়ে রাজপথে নেমেছে হাজার হাজার জনতা।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে এত আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনাও ব্রাজিলে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে পারেনি।
দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক এক সহযোগী এবং তার বড় ছেলে গ্রেফতার হলে জেইর বলসেনারোর পদত্যাগ চেয়ে রোববার রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ।
এই আন্দোলনের মূল দাবি জেইর বলসেনারোর অভিশংসন।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের অনুসারীরাও তার সমর্থনে রাজপথে নেমেছে। তাদের দাবি, কংগ্রেস এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমানোর চেষ্টা করছে।
ব্রাজিলে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ৬১৭ জন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সময় রোববার যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি করোনাভাইরাস রিসার্চ সেন্টারের প্রকাশিত তথ্য থেকে দেখা গেছে, ব্রাজিলে করোনাভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৫৯১ জনে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। কারণ দেশটিতে সীমিত আকারে করোনা টেস্ট করা হচ্ছে।
লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশটিতে প্রায় প্রতিদিন এক হাজারের বেশি মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত হয়, কিন্তু সপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সংখ্যাটি কিছুটা কমে যায়।
২৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাজিলে প্রথম নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। তারপর ৪ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে শুক্রবার আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ পার হয়।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তিনি যথাযথ পদক্ষেপ নেননি এবং বিষয়টিকে গুরুত্বই দেননি।
করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন। তিনি শুরু থেকেই করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব না দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এমনকি এত সংক্রমণের মধ্যেও দেশটিতে লকডাউন দেয়ার বিপক্ষে তার অবস্থান। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বন্দ্বে পরপর দুজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এরপর থেকে দেশটি এখনও স্থায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী পায়নি।
সার্বিক পরিস্থিতিতে করোনার হটস্পট এই দেশটির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংক্রমণের পিক (সর্বোচ্চ পর্যায়) থেকে ব্রাজিল এখনও কয়েক সপ্তাহ দূরে আছে বলে সতর্কতা জানিয়েছেন তারা। অর্থাৎ, আগামীতে এখানে করোনা আরও ভয়াবহ তাণ্ডব চালাতে পারে।
ব্রাজিলে অধিক হারে করোনা সংক্রমণের জন্য দেশটির অস্থির রাজনীতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে যখন করোনার সংক্রমণ তখনও বিভিন্ন সময় সমর্থকদের নিয়ে জমায়েত করেছেন বলসোনারো। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে বিরোধী পক্ষ। রোববারও বলসোনারোর বিরোধীরা রাজপথে নামেন। সার্বিক এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ব্রাজিলে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল।
এদিকে রোববার পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০ লাখ। এছাড়া এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষের। সূত্র-যুগান্তর