করোনাভাইরাস সঙ্কটে ভুগছে সারাবিশ্ব। মৃত্যু মিছিলে যোগ দিচ্ছে একের পর এক দেশ। করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ২১০ দেশ ও অঞ্চলে। দুই লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ লাখের বেশি মানুষ।
বাংলাদেশেও এর প্রকোপ বাড়ছে আস্তে আস্তে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুও নেই থেমে। করোনা প্রতিরোধে জনজীবন বিপর্যস্ত। দেশব্যাপী লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রায় সবকিছু। এর মাঝে কেমন করে দিন কাটাচ্ছেন কুষ্টিয়ার লালন অনুসারী সাধুরা?
‘আপন ঘরের খবর নেনা, অনা’সে দেখতে পাবি কোনখানে সেই বারামখানা’ বাউল সাধক ফকির লালন সাঁইজি তার জীবদ্দশায় মানব ধর্মের কথা বলেছেন, নিজে পালন করেছেন এবং তাঁর শিষ্যদেরও একই মত ও পথ দেখিয়েছেন। ফকির লালন শাহ্ নিজেও সে সময়ের মহামারী বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে পালক মা’র সেবায় বেঁচে উঠেছিলেন।
এখনও সেই অজানা অদৃশ্য মহামারী রোগে সারা বিশ্ব আতঙ্কিত। লালন সাঁইজিকে মৃত ভেবে তাকে না ছুঁইয়ে কলার ভেলায় ভাসানো হয়েছিল, ঠিক এখনও তাই করোনা রোগে আক্রান্ত হলে জানাজা পড়ানোর ঈমাম খুঁজে পাওয়া দুস্কর হচ্ছে। রোগীকে রাখা হচ্ছে বনবাসে তালপাতার কুটিরে। সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে সামাজিক আর শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার চেষ্টা করছেন।
গতকাল বুধবার এ দূরত্ব মেনে চলার ৫২তম দিন পার হয়েছে। প্রায় দু’মাস হতে চলা এই অঘোষিত লকডাউনে সরকারি বা বেসরকারি ভাবে কর্মহীন, দিনমজুর, দরিদ্র, অস্বচ্ছল ও দুস্থদের মাঝে কম-বেশি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই ত্রাণ সহায়তার আওতায় কি শুভ্র বসনে ও ভুষনে থাকা মানবধর্মে বিশ্বাসী লালন অনুসারী মানুষ গুলো এসেছেন? একবারও কি খোঁজ নেওয়া হয়েছে তাদের? কিন্ত এরাও তো এই সমাজের অংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ঘরবন্দী ফকির-সাধু তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন দীনহীনভাবে। এরা সবসময়ই সংসারের বেড়াজাল বলেন আর মায়াজাল বলেন তার বাইরে থাকেন। স্বেচ্ছায় কেউ অন্নদান করলে তা গ্রহণ করেন, কিন্তু তা কখনও হাত বাড়িয়ে চেয়ে নেন না।
গুরুভক্তে বিশ্বাসী প্রকৃতিপ্রেমী নির্লোভ মানুষগুলো কখনও অন্যের অমঙ্গল কামনা করেন না। যেমনটি সাধারণত হয়ে থাকে, কেউ ত্রাণ বা সাহায্য সহযোগিতা না পেলে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারকে একদম ‘উদ্ধার’ করে দেয়! কিন্তু সহজ সরল নির্লোভ সাদা মনের মানুষগুলো না খেয়ে থাকলেও কখনও হীনদৃষ্টি দিয়ে অন্যের অনাসৃষ্টি করেন না। অথচ এদের খবর নেবার একটিবারও প্রয়োজন বোধ হয়নি প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের।
সাধুরা সংসারত্যাগী নির্লোভ মানুষ। এরা ভক্তদের সেবা নিয়ে অথবা সাধুসঙ্গ করে মূলত দিনাতিপাত করে থাকেন। করোনায় বর্তমানে সকলেই নিজ বাড়িতে বন্দী। বাদ নেই সাধু, গুরু ও লালন ভক্তবৃন্দ। কোন ধরনের খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে না তারা।
নিরামিষভোজী এসব মানুষগুলো খেয়ে বা না খেয়ে থাকলেও কাউকে বলবে না অন্নদানের কথা। তাই সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিৎ এসব ধামবন্দী সাধুদের অন্নদানে। এমনটিই মনে করছেন স্থায়ীয় সুশীল সমাজ।